কিন্তু গোরু চুরি করে পাচার করবে কীভাবে? ম্যাটাডর বা লরিতে চাপিয়ে নিয়ে গেলে পুলিসের ধরপাকড়। সে এক মস্ত ঝক্কি-ঝামেলা। তাই, পুলিসের নজর এড়াতে অভিনব পন্থা নিল তারা। নামি ব্র্যান্ডের গাড়ির সিট খুলে সেখানে চুরি করা গোরু ঢুকিয়ে চালান করে দেওয়া। বাছুর হলে চারটি। বয়স্ক গোরু হলে নিদেন পক্ষে দু’টি। অভিনব এই পাচার পদ্ধতিতে আরও একটি সুবিধা হল, গাড়িগুলি হাইস্পিড। সুযোগ বুঝে গোরুকে কোনওরকমে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই, ঝড়ের গতিতে ভ্যানিস হয়ে যাওয়া। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে পারলে মোটা টাকা। বেশ কিছুদিন ধরেই শিল্পাঞ্চলে এভাবেই চলছিল গোরু পাচার। শেষে চোরেদের চৌষট্টি বুদ্ধিকে হার মানিয়ে পর্দা ফাঁস করে দিল পুলিস। । আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ তিনটি গোরু চোরের গ্যাং এই পদ্ধতিতে গোরু পাচার করছে বলে পুলিস সূত্রের খবর। সেইমতো নামি ব্রান্ডের গাড়িগুলিতে তল্লাশি চলছে। জামুড়িয়া থানা এলাকায় একই ধরনের বিশেষ ‘অন্দরসজ্জার’ একটি গাড়ি পুলিস বাজেয়াপ্ত করেছে। গাড়িতে থাকা চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডাকাতির মামলা রুজু করা হয়েছে। গোরু চুরিতে এদের কতটা যোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। ডিসি ধ্রুব দাস বলেন, ‘গাড়ির সিট খুলে দিয়ে তা গোরু চুরিতে ব্যবহার করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই ধরনের একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’
শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় অবাধে চরে বেড়ায় গোরু। সেগুলি কিন্তু বেওয়ারিশ নয়। মালিক সময় সময়ে দুধ সংগ্রহ করে নিয়েই গোরুগুলিকে ছেড়ে দেয়। খাবারের সন্ধানে তারা ঘুরে বেড়ায় জাতীয় সড়ক থেকে রাজ্য সড়কে। অবাঙালি এলাকায় গোরুর জায়গা দখল নেয় মোষেরা। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে গোরু চোররা। কিছুদিন ধরে ম্যাটাডোরে করে গোরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছিল। আসানসোল দক্ষিণ থানা মহিশীলা এলাকা হোক বা সালানপুর—একাধিক ঘটনায় পুলিস গোরু চোরদের শায়েস্তা করেছিল। ম্যাটাডোরে করে দ্রুত গতিতে গোরু নিয়ে পালানো যায়না। তারউপর বাইরে গোরুগুলিকে দেখা যায়। এবার তাই কৌশল বদল করেছে শিল্পাঞ্চলের চোররা। দামি দ্রুত গতি সম্পন্ন গাড়িগুলির ভেতরের সজ্জা পরিবর্তন করে গোরু তোলার উপযোগী করে তুলেছে তারা। তা দিয়েই চলছে চুরির গোরু নিয়ে যাওয়া।
আসানসোল উত্তর থানার এক পুলিস আধিকারিকের কথায়, যে সব ফাঁকা জায়গায় গোরুর আনাগোনা রয়েছে, চোররা সেই জায়গাগুলিকে প্রথম চিহ্নিত করে। এরপর ওই বিশেষ গাড়ি নিয়ে সেখানে নীরবে অপেক্ষা করতে থাকে। লোকজন না থাকলে গোরু গাড়িতে তুলেই চম্পট দেয়। এই ধরনের গাড়ির হদিশ মিলতেই পুলিস ধাওয়া শুরু করে। ওই বিশেষ গাড়িগুলি নিয়ে থানার নানা প্রান্তের লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর ফাঁড়ির পুলিস গুঞ্জন পার্কের সামনে তল্লাশি চালানোর সময় রাতে স্করপিও নিয়ে একদল লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। পুলিস গেলে বাকিরা পালিয়ে যায়। চারজন ধরা পড়ে। পুলিসের জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে তারা। ডাকাতির উদ্দেশেই তাদের জমায়েত বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিসের মনে হয়। কিন্তু তাদের কাছে যে গাড়িটি পাওয়া গিয়েছে তার চালকের আসন ছাড়া সিট নেই। পুলিসের সন্দেহ, এই দলটি গোরু চুরির সঙ্গে যুক্ত। প্রতীকী চিত্র