নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সাইবার প্রতারণা থেকে জালনোটের কারবারে অভিযোগ উঠল বিজেপির এক সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে। মুক্তি বক্সি নামে বিজেপির এই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। বাড়ি খয়রাশোলের আমাজোলা গ্রামে। ভোটের সময় পদ্ম শিবিরের ইলেকশন এজেন্ট হিসেবে এলাকায় তার দাপটও দেখা গিয়েছে। মুক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাইবার প্রতারণার ক্ষেত্রে সে অত্যন্ত পারদর্শী। ওটিপি হাতিয়ে গরিব মানুষের সঞ্চিত অর্থ লুট করত। আবার জালনোট কারবারেও তার নাম উঠে আসছে। অভিযোগ, নিজেই জালনোট ছাপিয়ে সেগুলি বাজারে ছড়িয়ে দিত মুক্তি। তার এই অপরাধমূলক কীর্তি প্রকাশ্যে আসতেই মুক্তি সম্পর্কে হাত ধুয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। ধৃতকে সোমবার দুবরাজপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সাইবার প্রতারণা পুলিসের খাতায় অনেক আগেই নাম উঠেছিল মুক্তির। বাঁকুড়া পুলিসের হাতে সে ধরাও পড়ে। ফোন করে ওটিপি হাতিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিত সে। অভিযোগ, কয়েক বছরে সাইবার প্রতারণার জাল বিছিয়ে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছে মুক্তি। বাড়িতে বসেই সে এই কাজ করত। কীভাবে একের পর এক সাইবার ক্রাইম করেছে, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিস। অনেকদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলছিল। পুলিসও তক্কে তক্কে ছিল। তার জালনোটের কারবারের খবরও পুলিসের কাছে ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় বাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিস তাকে আটক করে। শুরু হয় তল্লাশি। মুক্তির পকেট থেকে একটি ডেবিট কার্ড, ২২টি জাল নোট, ৪টি মোবাইল, একাধিক পাসবুক মেলে। তারপরই পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। তার গোপন ডেরায় আরও বহু জাল নোট জমা রয়েছে বলে মনে করছে পুলিস। সেগুলিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু কীভাবে তার এত বাড়বড়ন্ত সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের মত তার টিমেও কিছু যুবকরা থাকতে পারে বলে সন্দেহ। যারা ফোন করে ওটিপি হাতিয়ে টাকা লুট করে। সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছে পুলিস। খয়রাশোল থানার এক আধিকারিক বলেন, হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওর অপরাধ সাম্রাজ্য কতখানি বড়, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। প্রতিটি নির্বাচনে সে দলের এজেন্ট হিসেবে বসত। বিজেপির ছত্রছায়ায় থাকার কারণেই কী এই প্রতারণা কারবার এতদিনেও সামনে আসেনি, প্রশ্ন তুলছে শাসকদল তৃণমূল। তাদের দাবি, ঝাড়খণ্ডের ভোটে টাকা আদান-প্রদানে এই বিজেপি এজেন্ট যুক্ত থাকতে পারে। তাই পুলিস তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য যেন খতিয়ে দেখে পুলিস। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, পুলিস তৎপরতার সঙ্গে ওই বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। শুনতে পারছি অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা সে হাতিয়েছে। সেই টাকা আবার অন্য জায়গায় পাচার করেছে। মঙ্গলবার খয়রাশোল ঘেঁষা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে। মনে হচ্ছে, ধৃত মুক্তি বিজেপির হয়ে সেই রাজ্যে অনেক টাকা পাঠিয়েছে। ভালোভাবে তদন্ত হলে বড় মাথারা ধরা পড়বে। এইসব গুণধররা বিজেপির আশ্রয়েই থাকে। যদিও বিজেপির দাবি, তারা এই কাজকে সমর্থন করে না। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, ওর বিরুদ্ধে দলও ব্যবস্থা নিয়েছে। দল বিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিস সঠিকভাবে তদন্ত করুক সেটা আমরাও চাই।