• যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের বাড়ির সামনে দামি গাড়ি!
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: মেদিনীপুর জেলা পুলিস রবিবার অভিযান চালিয়ে ১৩ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলা পুলিস সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘ঘাটালের আলুই গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছিল। ধৃতদের থেকে তিনটি ওয়ান শটার, ১০ রাউন্ড গুলি, গ্যাস কাটার সহ নানা সামগ্রী উদ্ধার হয়। পুলিস জানতে পারে তারা রাসায়নিক সারের গুদাম ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ডাকাতির ছক করছিল।’ পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তারমধ্যে কমল ও অরুণাভর বাড়ি ঘাটাল থানা এলাকায়। সোমবার ধৃতদের ঘাটাল মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের মধ্যে কমল, অরুণাভ, রামানন্দ পাসোয়ান এবং রঞ্জিত দাসের তিনদিনের পুলিস হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজত মঞ্জুর করেছে আদালত।


    কমলের আদি বাড়ি ঝাড়গ্রামে। কমলের বাবা আলুই গ্রামে ঘরজামাই থাকতেন। বেশ কিছুদিন হল কমলের বাবা-মা দেনার দায়ে বাড়ি ছাড়া। কমল তার স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ওই গ্রামে থাকত। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা গেল, কমল কোনও স্থায়ী কাজ করত না। বাড়ির অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু কয়েক মাস হল ওর বাড়িতে প্রচুর হিন্দিভাষী মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বাড়ির সামনে দামি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত। দোকান থেকে কেজি কেজি মাংস আসত। চলত মদ-মাংসের আড্ডা। কমলের বাড়িতে যারা থাকত তাদের দিনের বেলায় বাড়ির বাইরে দেখা যেত না। রাতের দিকে বাড়ির সামনে চলাফেরা করতে দেখা যেত।


     রবিবার সকালের দিকে কমল তার দুই শাগরেদকে নিয়ে বাড়ির সামনে কাটান খালের পাশে বসে মদ খাচ্ছিল। সেই সময়ই পুলিস তিনজনকে ধরে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দূর থেকে কোনও ভাবে কমলের স্ত্রী ঝুমা ওই ঘটনা দেখতে পায়। তখনই সে বাড়িতে আরও দুষ্কৃতীদের রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পাড়ার দিকে পালিয়ে যায়। পুলিস কমলের বাড়ি গিয়ে বাকি দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।


    অন্য দিকে আলুইয়ের পাশের গ্রাম রাধানগরের বাসিন্দা অরুণাভকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিবেশীরা তিতিবিরক্ত ছিলেন। তার বাবা-মাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন। স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে অরুণাভ  দিনের ২৪ ঘণ্টাই মদ, গাঁজা নিয়ে থাকত। স্থানীয় এক জন প্রতিনিধি জানান, প্রায়ই অরুণাভ তার বাবা-মাকে খুনের হুমকি দিত। গ্রাম পঞ্চায়েত ও শাসক দলের স্থানীয় নেতারা বহু বার মিটিং করে সতর্ক করে দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাধানগরের এক ব্যবসায়ী জানালেন, অরুণাভদের একটি লজ রয়েছে। সেখানে প্রায়ই অচেনা যুবকদের থাকতে দেখা যেত। তাই এলাকা থেকে ওই দুই যুবক গ্রেপ্তার হওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, তা না হলে এক দিন হয়তো এলাকারই কারও না কারও সর্বনাশ হয়ে যেত।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)