• গজরাজের রোষানল থেকে ফিরে পুনর্জন্ম সোনমের
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: রাত ১১টা। চারদিক নিস্তব্ধ। কৃষ্ণপক্ষর রাতে বাইরে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। আচমকাই ভারী পায়ের শব্দ। সঙ্গে বুনো গন্ধও। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন চঞ্চল হয়ে উঠল। বিভিন্ন দিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচি। জলঢাকা জঙ্গল থেকে একটি হাতি এসেছে গ্রামে। পাকা ধান সাবাড় করতে ঢুকেছে কৃষিফার্ম এলাকার খেতে। লোকজন পটকা ফাটিয়ে সমস্বরে হইহল্লা করতেই হাতিটি নাগরকাটার সুখানির বস্তিতে ঢুকে পড়ে। লোকজনের তাড়া খেয়ে সুখানি নদীর ধারে সোনম ভুটিয়ার বাড়ির পাশে ছোট জঙ্গলে আশ্রয় নেয় হাতিটি। বিশালদেহি গজরাজকে দেখে সোনম বাড়িতে ঢুকে পড়ে। হাতিটিও তাঁকে দেখতে পেয়ে তাঁর বাড়ির উঠোনে এসে হাজির হয়। তখন দৌড়ে ঘরে ঢোকেন সোনম। সাধারণত হাতি রুষ্ট হয়ে কাউকে টার্গেট করলে তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারে কিংবা পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে। এটা জানে সোনম। তাই ঘর থেকে বেরিয়ে পালানোর উপায় ছিল না। অগত্যা চটের বস্তা আর বিছানা থেকে কম্বল টেনে গায়ে জড়িয়ে দমবন্ধ করে নিজেকে চৌকির তলায় লুকিয়ে রাখেন। ঘটনা রবিবার রাতের। 


    হাতিটিও ছিল নাছোড়। প্রকাণ্ড শরীরের হাতিটি সোনমের ঘরের একটি অংশ ভেঙে দিয়ে শুঁড় ঢুকিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এদিক ওদিক শুঁড় ঘুরিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। কম্বলের আড়াল থেকে সোনম বুঝতে পারে হাতিটি তাঁকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। একসময় হাতিটি সোনমের শরীরে জড়ানো বস্তা-কম্বল শুঁড় দিয়ে স্পর্শও করে। হাড়হিম করা অবস্থা তখন। বাইকে কেউ নেই। একদিকে গজরাজ অন্যদিকে সে। এই পরিস্থিতিতে সোনম ভুটিয়া ধরেই নেয় আর রক্ষা নেই। এবার তাঁকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মেরেই ফেলবে। শীতের রাতে কুয়াশা। ভয়ে গোটা শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ছিল তাঁর। ঈশ্বরকে স্মরণ করতে থাকেন। হাতির আরএক নাম মহাকাল। তখন মহাকাল নাম জপ করতে থাকেন। 


    ঘরে কোনও প্রাণের অস্তিত্ব না পেয়ে ঘরে টিনে, বেড়ায় বারবার আঘাত হানতে থাকে হাতিটি। রাগের বশে উঠোনে ভারী পায়ে আঘাত করে মাটি উপরে ফেলে। এভাবেই টানা ৩০ মিনিট সোনমের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করে পরে সুখানি নদী পেরিয়ে জঙ্গলে ফিরে যায়। হাতি চলে যাওয়ার পরও ভোরের আলো না ফোটা পর্যন্ত বস্তা ও কম্বলের ভিতরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন সোনম। 


    সোমবার সোনম ভুটিয়া বলেন, পুনর্জন্ম হল। ঘর ভেঙে যেভাবে হাতিটি আমাকে খুঁজছিল তাতে ধরেই নিয়েছিলাম আর হয়তো সূর্যোদয় দেখতে পাব না। ঈশ্বরের কৃপায় বেঁচেছি। খুনিয়ার রেঞ্জার সজলকুমার দে বলেন, হাতিটিকে রাতেই তাড়িয়ে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিয়েছি। 


    অন্যদিকে, সোমবার সকালে একটি হাতি নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙা চা বাগানে ঢুকে একটি রেশন গোডাউন ভেঙে দেয়। সেখানে মজুত ১০ বস্তা চাল সাবাড় করে।  
  • Link to this news (বর্তমান)