• মেয়ের বিয়ে দেওয়া হল না, চাঁদা তুলেই দিল্লি থেকে ফিরল পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, চাঁচল: মেয়ের বিয়ে দিতে দরকার প্রচুর টাকা। সেজন্য সপরিবারে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন শেখ সাকরাতু বাবু(৫০)। স্বপ্ন ছিল,রাজধানীতে খেটে মোটা টাকা উপার্জনের পর ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন থমকে গেল এক নিমেষে। অসুস্থ হয়ে দিল্লিতেই মৃত্যু হল মালদহের চাঁচল-১ ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ব্যক্তির। কিন্তু, গ্রামে দেহ ফিরিয়ে আনারও সামর্থ্য নেই। শেষমেশ গ্রামবাসীর থেকে চাঁদা ও আত্মীয়দের থেকে ৪০ হাজার টাকা সাহায্য নিয়ে স্বামীর দেহ সহ গ্রামে ফিরলেন স্ত্রী মাতুন বিবি। তা দেখে গ্রামে কান্নার রোল। 


    অন্যদিকে, মুম্বই থেকে বাড়ি ফেরার সময় মাঝপথে ট্রেনে মৃত্যু হয় চাঁচল-১ ব্লকের শীতলপুরের ফাইয়াজ আলমের(২৮)। তিনি সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। এজন্য রাজ্য কর্মসংস্থানের অভাবকে দায়ী করে তৃণমূলকে তোপ দাগছে বিজেপি। তবে, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করায় পাল্টা বিজেপিকেই দোষ দিয়েছে তৃণমূল। এদিন গ্রামে ফিরতেই তিনকন্যা এবং এক নাবালক সন্তানকে নিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় মাতুনের। তিনি বলেন, মেয়েদের বিয়ে দিতে উপার্জনের আশায় গ্রাম ছেড়েছিলাম। স্বামী নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। আমরাও কাজ জুটিয়েছিলাম। এখন সংসার কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। স্থানীয় বাসিন্দা সামিউল আলম বলেন, এলাকায় কাজ পেয়ে সাকরাতুবাবু সপরিবারে দিল্লি যান। সরকারি সাহায্য পেলে পরিবারটি বাঁচবে। এদিকে, শীতলপুরের ফাইয়াজ আলম মুম্বাইয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। তাঁর পরিবারে রয়েছে দুই নাবালক সন্তান, স্ত্রী এবং বৃদ্ধ বাবা-মা। তিনিই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। পরিবার জানিয়েছে, অসুস্থতার জেরে সে ট্রেনে মারা যান। তার সফর সঙ্গী বলে কেউ ছিল না। সেই ট্রেনে থাকা হরিশ্চন্দ্রপুরের এক যুবকের সাহায্যেই তাঁর দেহ গ্রামে ফেরে। মৃতের শ্রমিক ফাইয়াজের স্ত্রী নাসিমা খাতুন বলেন, চাষের জমি নেই। বাস্তুভিটে টুকুই ভরসা। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। মৃতের স্ত্রীর বিধবা ভাতা দ্রুত চালু সহ পরিবারগুলি যাতে সরকারি সুবিধা যাতে পায়  তা দেখা হবে বলে চাঁচলের মহকুমাশাসক শৌভিক মুখোপাধ্যায় জানান। এদিকে বারবার এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফেরায় উদ্বেগে শাসকদল তৃণমূল। চাঁচল ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শেখ আফসার আলি বিজেপিকে শানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপি ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ স্থগিত করেছে। কিন্তু অন্য রাজ্যে এই কাজ ঠিকই চালু রেখেছে। এখানে এই কাজ চললে এইদিন দেখতে হতো না। এদিকে চাঁচল বিধানসভার বিজেপির কো-কনভেনার সুমিত সরকার বলেন, তৃণমূলের নেতা জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতি না করলে এই প্রকল্পের কাজ এখানে চলত। 


      মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের শোকার্ত পরিবার।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)