• উধাও রেশন! ক্ষতি ৭০ হাজার কোটির, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দেশজুড়ে দুর্নীতির ছায়া
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • নয়াদিল্লি: রেশনের চাল-গম নিয়ে দেশজুড়ে দুর্নীতির ছায়া! ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। অথচ, সারা দেশে ২৮ শতাংশ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর আগেই উধাও হয়ে যাচ্ছে রেশনের চাল-গম। পরিমাণটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো, প্রায় ২ কোটি টন। আর এর জেরেই প্রতি বছর রাজকোষের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা! ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইইআর) রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই চাল-গম ঘুরপথে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খোলা বাজারে। এমনকী বিদেশে পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এহেন পাচারের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছ বিজেপি বা এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যও পড়ছে তার মধ্যে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সারা দেশে যত পরিমাণ রেশনের চাল উধাও হয়েছে, তার ৬৪.৫ শতাংশই উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, গুজরাত—এই পাঁচ ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য থেকে। উল্টোদিকে পাচার রুখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেশনের খাদ্যপণ্য পাচার আটকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই সবচেয়ে সফল। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে বাংলায় রেশনের খাদ্যপণ্য পাচারের পরিমাণ ছিল ৬৯.৪ শতাংশ। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে সেই হার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ শতাংশে।


    তিন গবেষক রায়া দাস, রঞ্জনা রায় ও অশোক গুলাটি তৈরি করেছেন ওই রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে, গত অর্থবর্ষে সবচেয়ে বেশি রেশনের খাদ্যশস্য পাচার হয়েছে অরুণাচল প্রদেশ থেকে। সেই রাজ্যে ৬৩.২ শতাংশ চাল-গমই গ্রাহকের হাত পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়নি। দ্বিতীয় নাগাল্যান্ড, সেখানে এই হার ৬০.৪ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাত। তিনি যতই ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’র স্লোগান তুলুন, বাস্তবে তাঁর গুজরাতেই রেশনের ৪৩ শতাংশ খাদ্যশস্য বৈধ গ্রাহকদের ঘরে যায়নি। যদিও সামগ্রিকভাবে এই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে বিজেপির ‘মডেল’ উত্তরপ্রদেশ। যোগীরাজ্যে রেশনের জন্য বরাদ্দ ৩৩ শতাংশ চাল-গম পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে লোকসভায় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী দানভে রাওসাহেব দাদারাওয়ের দেওয়া পরিসংখ্যানও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণবণ্টন সংক্রান্ত ৮০৭টি দুর্নীতি মামলার মধ্যে ৩২৮টিই দায়ের হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও মহারাষ্ট্রেও বিপুল হারে খাদ্যশস্য খোলা বাজারে চলে যাচ্ছে। তবে বাংলার পরে পাচার রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যে রাজ্যটি, তার নাম বিহার। তারা ওই ১১ বছরে পাচারের হার ৬৮.৭ থেকে ১৯.২ শতাংশে কমিয়ে এনেছে। ভারতে ৮১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেয় সরকার। সরকারি পরিকাঠামো সত্ত্বেও গণবণ্টন ব্যবস্থা থেকে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য খোলা বাজারে চলে যাওয়ার কারণ কী? রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এখনও গোটা ব্যবস্থায় বেশ কিছু খামতি থেকে গিয়েছে। তবে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর সংযোগ বাধ্যতামূলক হওয়ার পর কিছুটা স্বচ্ছতা এসেছে। কিন্তু ডিজিটাল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা এখনও চালু না হওয়ায় পাচার পুরোপুরি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।
  • Link to this news (বর্তমান)