• বিরল ছবি! একসঙ্গে পুজো পায় কার্তিক-গণেশ দুই ভাই
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: বাঁশবেড়িয়া থেকে সামান্যই দূরত্ব চন্দননগরের। কিন্তু যখন বাঁশবেড়িয়া কার্তিক পুজোর জৌলুসে আলোময় তখন চন্দননগরে কার্যত নীরবে পুজো হয় এক কার্তিকের। জগদ্ধাত্রী পুজোর শহরে সেই কার্তিক নিয়ে কারও কোনও উৎসাহ নেই। ফলে উদ্যোগের অভাবে বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। সেই পুজো বহু প্রাচীন। ছুঁতে চলেছে ২০০ বছরের মাইলফলক। এ পুজোর আঙ্গিকও বিরল। বিশিষ্ট আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ প্রয়াত সুধীরকুমার মিত্র এই পুজোকে গোটা বাংলার নিরিখেই বিরলতম আখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ একমাত্র চন্দননগরের সরিষাপাড়া চৌমাথাতেই কার্তিক ও গণেশের একসঙ্গে পুজো হয়। একদিকে যখন বাঁশবেড়িয়া, চুঁচুড়ায় কার্তিক পুজো নিয়ে মহা আড়ম্বর। তখন নিভৃতেই পড়ে সরিষাপাড়ার কার্তিক-গণেশ। হুগলির পুজোচিত্রে এ এক তাজ্জব করে দেওয়া উলটপুরাণ। 


    মানুষের উৎসাহ নেই বলে পুজোর পরই বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয় হর-গৌরীর সন্তান দুই দেবতাকে। এবার শনিবার পুজো ছিল। রবিবার রাতেই বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। এই পুজোর আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান সঞ্জীব কুমার। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ইতিহাসের বিখ্যাত বইয়ে সরিষাপাড়ার কার্তিক-গণেশ পুজোর কথা লেখা আছে। অথচ পুজোর আয়োজনে লোক মেলে না। পুজোর আয়োজনের টাকাপয়সাও মেলে না। কতদিন এভাবে চলবে জানি না।’


    পুজোর সন-তারিখের হদিশ মেলে। স্বাধীনতার পর হুগলির আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে তত্ত্বতালাশ শুরু করেন সুধীরকুমার মিত্র। ১৯৪৮ সালে তাঁর ‘হুগলি জেলার ইতিহাস’ বইটি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি চন্দননগরের একমাত্র কার্তিক পুজো হিসেবে সরিষাপাড়া চৌমাথার উল্লেখ করেন। সেই সময়ই পুজোর বয়স ছিল প্রায় ১২০ বছর। সেই সাল পর্যন্ত বাংলার কোথাও কার্তিক ও গণেশের একসঙ্গে পুজো হতো না। সেই নিরিখে পুজোটি বিরল গোত্রের। সরিষাপাড়ার কার্তিকের শরীরের ঊর্ধাঙ্গে শুধু উত্তরীয়। ধুতি পরে থাকেন তিনি। গণেশের গায়ের রং লাল। দু’জনের পাশে থাকে একজন করে পরী। কার্তিকের সঙ্গে থাকেন এক উড়িয়া মালি। বিরল দর্শন এই মূর্তি দুই শতবর্ষ পরও লোকচর্চার অন্তরালে। অনেক আঞ্চলিক গবেষক বলে থাকেন, নিজের ইতিহাসের প্রতি বাঙালির অনাগ্রহ সত্যিই বিস্ময় উদ্রেক করে। 
  • Link to this news (বর্তমান)