এই পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোকর্তাদের একাংশ দেশের একাধিক বড় শহরের মেট্রোয় ওই ব্যবস্থা না থাকার সাফাই দিচ্ছেন। তাঁদের আরও যুক্তি, দিল্লি বা মুম্বইয়ের মতো শহরেও সব মেট্রো পথে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের ব্যবস্থা নেই। যদিও সেই যুক্তি মানতে নারাজ মেট্রোর আধিকারিকদের অন্য একটি অংশ। তাঁদের মতে, কলকাতা মেট্রোর সব পথে কাচের প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর বসানোর ক্ষেত্রে মূল বাধা বিপুল খরচ। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে ট্রেন নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি প্রয়োজন। যাতে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর এবং ট্রেনের দরজা একই সঙ্গে খুলতে পারে।
এই মুহূর্তে কলকাতা মেট্রোয় ইস্ট-ওয়েস্ট ছাড়া নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর, জোকা-এসপ্লানেড এবং নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রোর নির্মাণকাজ চলছে। চার দশকের পুরনো উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর বসানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রযুক্তি। নির্মীয়মাণ অন্য তিন মেট্রোপথেও স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর বসানোর ব্যবস্থা নেই। একমাত্র নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর এবং নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রোপথের বিমানবন্দর স্টেশনে এই ব্যবস্থা থাকতে পারে বলে খবর।
কয়েক বছর আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় প্ল্যাটফর্মের দু’প্রান্তে কাচের স্ক্রিন ডোর বসাতে স্টেশন পিছু গড়ে পাঁচ থেকে ছ’কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ওই মেট্রোয় ছ’কোচের রেক চলায় প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য কম (১২০ মিটার)। কিন্তু উত্তর-দক্ষিণ সহ নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর, জোকা-এসপ্লানেড এবং নোয়াপাড়া-বারাসত— সব মেট্রোপথে আট কোচের ট্রেন চলবে। এ ক্ষেত্রে এক-একটি স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য অন্তত ১৮০ মিটার বা তার বেশি। ফলে, সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলিতে স্ক্রিন ডোর বসানোর খরচও অনেকটাই বেশি হবে ইস্ট-ওয়েস্টের তুলনায়। আধিকারিকদের মতে, এক-একটি স্টেশনের ক্ষেত্রে এই খরচ সাত-আট কোটি টাকা পর্যন্ত পড়তে পারে।
কালীঘাট স্টেশনের ধাঁচে গার্ড রেল এবং স্বয়ংক্রিয় বুম বার যুক্ত ব্যবস্থাও বহু মেট্রো শহরে রয়েছে। কিন্তু ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই বুমের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি প্রয়োজন। তার সঙ্গে ট্রেনের দরজা খোলার সমন্বয় থাকাও জরুরি। আধুনিক রেডিয়ো সঙ্কেতনির্ভর ওই প্রযুক্তি এই মুহূর্তে রয়েছে শুধু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোতেই।
মেট্রো সূত্রের খবর, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর, জোকা-এসপ্লানেড এবং নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রোপথে রেডিয়ো সঙ্কেতনির্ভর ট্রেন নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। তা বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দর মেট্রো স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর বসানো যাবে। অন্য স্টেশনগুলিতেও বরাদ্দের ব্যবস্থা হলে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর অথবা বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় ভবিষ্যতে সিগন্যালিং এবং ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে ইস্পাতের থার্ড রেল বদল করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুরো ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হতে আরও কয়েক বছর লাগতে পারে। মেট্রোকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রযুক্তিগত বাধা এবং বিপুল খরচের কারণে সব মেট্রোপথের প্ল্যাটফর্মে সুরক্ষার ব্যবস্থা আপাতত করা যাচ্ছে না। তবে, ধাপে ধাপে উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পথ খোলা রাখা হচ্ছে।