• কাজ হারাবে দেড় লক্ষ, মন্দারমণির হোটেল ভাঙা স্থগিত
    বর্তমান | ২০ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ‘সত্যিই সব ভেঙে দেবে? কাজ চলে গেলে খাব কী? পরিবার তো পথে বসবে!’ গত ক’দিন ধরে মন্দারমণির উপকূল কার্যত আচ্ছন্ন হয়েছিল এই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায়। কারণ, ২০ নভেম্বরের মধ্যে মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেল ভেঙে ফেলার নির্দেশ জারি করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অন্তত দেড় লক্ষ মানুষ কাজ হারাতেন। এই অবস্থায় আবারও ‘মসিহা’ হয়ে দেখা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই হস্তক্ষেপে মন্দারমণির হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো স্তম্ভিত মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। এখন রাজ্য প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনওরকম বুলডোজার চলবে না রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্রে।  


    একইসঙ্গে রাজ্য সরকার আইনি পরামর্শ নেওয়ার কাজও শুরু করে দিয়েছে। কারণ, মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেলকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০ নভেম্বরের মধ্যে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল। জেলা প্রশাসন আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর করতে যাচ্ছিল। আগেই নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল, ২০ তারিখের মধ্যে হোটেল খালি না করে দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তারপর থেকে মন্দারমণিজুড়ে হোটেল মালিক থেকে সাধারণ কর্মী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়তে শুরু করে। সবাই বুঝতে পারছিলেন, এতগুলি হোটেল একসঙ্গে বন্ধ হয়ে গেলে মুখ খুবড়ে পড়বে মন্দারমণির পর্যটনের সার্বিক পরিকাঠামো।  


    ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। সেই সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মন্দারমণির ৫০টি হোটেল বন্ধের নোটিস দেয়। সেই সঙ্গে ১৯টি হোটেলকে ১২লক্ষ টাকা করে জরিমানা এবং ১০লক্ষ টাকা করে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট করতে বলে। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে এনজিটিতে যান হোটেল মালিকরা। কিন্তু সেখানে তাঁরা জোর ধাক্কা খান। কারণ, হোটেলের নোংরা জল যাতে সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে না পড়ে, তার জন্য ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ বসানো নিয়ম। কিন্তু অনেক হোটেল ওই প্লান্ট বসানোর অনুমতি নিয়েও তা বসায়নি। কিছু হোটেল তো কোনও উদ্যোগই নেয়নি এ বিষয়ে। এরপর করোনাকালে প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে সিআরজেড (কোস্টাল রেগুলেশন জোন) এলাকার মধ্যেই অনেক হোটেল গজিয়ে ওঠে। তখন সবক’টি অবৈধ হোটেল ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশেই নোটিস ধরানো হয়েছিল। নাহলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতো। মন্দারমণি হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি মীর মমরেজ আলি বলেন, ‘প্রশাসনের নোটিস চ্যালেঞ্জ করে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। তবে রাজ্য সরকার এত মানুষের রুজিরুটির কথা ভেবে সিদ্ধান্ত স্থগিত করায় আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করব, আলোচনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)