• বায়ুদূষণ! দিনে ৮ সিগারেটের ধোঁয়া আম জনতার ফুসফুসে
    বর্তমান | ২০ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাঁরা ধূমপায়ী নন, তাঁরাও প্রতিদিন গোটা আটেক সিগারেট টেনে ফেলছেন! এ এক আশ্চর্য কাণ্ড! তবে কোনও ম্যাজিক নয়। বায়ুদূষণ এখন লাগামছাড়া। ফলে তার প্রভাব সরাসরি পড়ছে মানব শরীরে। সিগারেটের ধোঁয়া টানলে যা ক্ষতি হয় তার সমতূল্য। তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির বায়ুদূষণের সূচক যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে কেউ যদি ২৪ ঘণ্টা বাড়ির বাইরে থাকেন তবে তাঁর ৪০টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি হবে। হরিয়ানায় সে সংখ্যা ২৯। পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। সোমবারের দূষণের সূচক অনুযায়ী, এখানকার ক্ষতিকর পরিস্থিতি ৭.৫টি সিগারেট সেবনের সমান। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মারাত্মক দিনের দিকে এগচ্ছে মানব সমাজ।’ 

    এখানে প্রশ্ন উঠছে, বায়ুদূষণের সুচক থেকে সিগারেটের ধোঁয়া টানার হিসেব কীভাবে হয়? প্রসঙ্গত বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন বিজ্ঞানীরা। একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, ‘বাতাসে ভাসমান পিএম (পার্টিকুলেট ম্যাটার) ২.৫ হল অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণা। যা চোখে দেখা যায় না। তার পরিমাণ ২২ হলে ধরে নিতে হবে-কেউ যদি ২৪ ঘণ্টা বাড়ির বাইরে থাকেন তবে তিনি একটি সিগারেটের ধোঁয়া টানলেন।’ কিন্তু সকলেই তো ২৪ ঘণ্টা বাইরে থাকেন না। সে ক্ষেত্রে কি ক্ষতির আশঙ্কা অতটা নয়? কেন্দ্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যে দেখা গিয়েছে, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় বালিগঞ্জ এলাকায় বায়ুদুষণের সূচক ছিল ২০৮। ওই সময় ওই এলাকায় কেউ যদি পাঁচ ঘণ্টা থেকে থাকেন, তবে তিনি দেড় খানা সিগারেট সেবনের সমান ক্ষতির সম্মুখীন হলেন।’ ওই সময় অনেক মানুষই ভিক্টোরিয়া এলাকায় বেড়াতে যান। বিকেল পাঁচটায় ওই এলাকায় বায়ুদূষণের সূচক ছিল ১৮৬। ফলে কেউ যদি ১০ ঘণ্টা ওখানে থাকেন তবে তাঁর সিগারেট সেবনের সংখ্যা হবে ২.৪০। ইন্টারনেটে রয়েছে ‘একিইউ টু সিগারেটস ক্যালকুলেটর’। লিঙ্কে ক্লিক করে দূষণের তথ্য দিলে পাওয়া যাবে, কতগুলি সিগারেট খেলেন আপনি। 

    মঙ্গলবার কলকাতা শহরের বায়ুদূষণের সুচক ছিল ১৭৮। আর হাওড়াতে ২৬৬। এদিন হাওড়ায় ২৪ ঘণ্টা কেউ বাইরে থাকলে তাঁর সিগারেটের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯.৮৪। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘যে কোনও মেট্রো সিটিতেই এখন একিউআই ইনডেক্স (বায়ুদূষণের সূচক) বেড়ে চলেছে। তা আমাদের শ্বাসযন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই সূক্ষ্ণ কণা আমাদের ফুসফুসে যাচ্ছে। যে কারণে ক্যান্সার পর্যন্ত হচ্ছে। যাঁরা স্মোকের (ধোঁয়ার) বলয়ের মধ্যে অনেকক্ষণ থাকছেন তাঁরা ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এমনকি গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের মধ্যেও আসছে পরিবর্তন। বায়ুদূষণের প্রভাব সাংঘাতিক।’  

    ‘তাহলে এর হাত থেকে বাঁচার উপায় কী? মানুষকে তো কাজের স্বার্থে অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে থাকতেই হয়’-প্রশ্নের উত্তরে স্বাতীদেবী বললেন, ‘মাস্ক একটা প্রাথমিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। আর প্রশাসন বেশি পরিমাণ জল স্প্রে করে রাস্তা ধোয়ার কাজ করলে দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)