নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মহাকরণে কয়েক যুগ ধরে চলতে থাকা ক্যান্টিনগুলির কোনও লাইসেন্স নেই। এমনকি খাবারের দোকান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফুড রেজিট্রেশনও নেই। চোখ কপালে তোলা এই অব্যবস্থার চিত্র এবার সামনে এল।
অভিযোগ আরও আছে, ক্যান্টিনে ব্যবহার হচ্ছে রান্নার নিম্নমানের মশলা। সম্প্রতি পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগ অভিযান চালিয়েছিল সেখানে। ঘটনাস্থলে গিয়ে এই অব্যবস্থা হাতেনাতে ধরেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাজ্য প্রশাসনের একাধিক দপ্তরের কর্মী-আধিকারিক এবং বাইরে থেকে আসা বহু ব্যক্তি মহাকরণের ক্যান্টিনগুলিতে খেতে আসেন। সেখানকার রান্নাঘরের এ হেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আতঙ্কিত করছে সবাইকে। অভিযানের পর মঙ্গলবার মহাকরণের সাতটি ক্যান্টিনের তিনটি থেকে কয়েকজন ব্যক্তি পুরসভায় আসেন। তাঁরা নিজেদের মালিকপক্ষ বলে পরিচয় দিয়ে লাইসেন্স করাতে আগ্রহ দেখান বলে জানা গিয়েছে।
একসময় রাজ্য সরকারের প্রধান কার্যালয় ছিল মহাকরণ। বসতেন মুখ্যমন্ত্রীও। তবে বর্তমানে বহু দপ্তর অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে। এখন আংশিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক অফিস সেখানে চলছে। ফলে প্রশাসনিক আধিকারিক সহ বহু কর্মী নিয়মিত যাতায়াত করেন। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীর অফিসও রয়েছে। আছে বিচার ব্যবস্থা ও আইন দপ্তর, স্বরাষ্ট্র, অর্থদপ্তরের একাধিক অফিস। পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে খবর, সম্প্রতি সেখানকার বিভিন্ন ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ উঠছিল। খাবার খেয়ে অনেকের শারীরিক সমস্যা তৈরির খবরও আসছিল। তাই রাজ্য কলকাতা পুরসভাকে অভিযানে যেতে নির্দেশ দেয়। তারপর মহাকরণের ক্যান্টিনগুলিতে যান পুরসভার ফুড সেফটি অফিসাররা। গিয়েই আধিকারিকদের চোখ কপালে। পুরসভার বক্তব্য, লাইসেন্স কেউ দেখাতে পারেনি। খাবারের দোকান চালাতে গেলে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ফ্যাসাই (এফএসএসএআই) থেকে ফুড রেজিট্রেশনের সার্টিফিকেট নিতে হয়। সেটিও সাতটি ক্যান্টিনের মধ্যে কারও কাছে নেই। সেখানে ব্যবহৃত হলুদ-লঙ্কার গুঁড়ো, জিরে সহ অন্যান্য মশলার মান অত্যন্ত খারাপ। পুরসভার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পুরসভা কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট (সিই) দেয়। সেটা ট্রেড লাইসেন্স হিসেবে গণ্য হয়। খাবারের ব্যবসার ক্ষেত্রে তা দেখিয়ে এফএসএসএআই রেজিট্রেশন করে সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু মহাকরণের সাতটি ক্যান্টিনের কারও কাছেই তা ছিল না। অভিযানে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, যে পরিবেশে রান্না করা হচ্ছিল তা অস্বাস্থ্যকর। যে ড্রামে জল রাখা ছিল, সেগুলিতে প্রায় শ্যাওলা পড়ে গিয়েছে। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। জানা গিয়েছে, অভিযানের পর তিনটি ক্যান্টিনের মালিকপক্ষ মঙ্গলবার পুরসভায় লাইসেন্স করানোর জন্য আসেন। কিন্তু তাঁদের নথিপত্র নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তাই লাইসেন্স করানো হয়নি। এক আধিকারিক বলেন, যাঁরা এসেছিলেন তাঁরাই যে সেই ক্যান্টিনের মালিক তার কোনও প্রমাণ নেই। ফলে সমস্ত কিছু যাচাই না করে লাইসেন্স ইস্যু সম্ভব নয়। -নিজস্ব চিত্র