ফলে হাসপাতাল পরিণত হয়েছে এলাকার মদ্যপায়ী ও সমাজবিরোধীদের আখড়ায়। যেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসবাস করার কথা সেই কোয়ার্টারগুলি এখন হয় গরুর গোয়াল না হয় স্থানীয় ফসল রাখার গুদাম। বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের গুন্নাথ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমন ছবি উঠে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একসময় বেশ নামডাক ছিল। এলাকার মানুষের চাহিদা থাকায় ধীরে ধীরে আউটডোর পরিসেবার পাশাপাশি শুরু হয়েছিল ইনডোর পরিসেবাও।
স্বল্প সংখ্যক বেড যুক্ত সেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হত। হাসপাতাল চত্বরেই থাকা বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারে বসবাস করতেন চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা। আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিল এই হাসপাতাল। কিন্তু সে সবই এখন অতীত। মাত্র এক দশকেই সেই হাসপাতাল এখন কার্যত ভুতুড়ে পোড়ো বাড়ি। হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক না থাকায় ন্যুনতম চিকিৎসা পরিসেবাটুকু পেতেও এখন গ্রামগুলির মানুষকে ছুটতে হয় ১২ কিলোমিটার দূরে থাকা ইন্দপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
হাসপাতালে মাঝেমধ্যে এক ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আউটডোর খুলে বসতে দেখা গেলেও প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও তাঁরা দিতে পারেন না বলে অভিযোগ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলির জানালা দরজা সবই চুরি হয়ে গেছে। ফাঁকা কোয়ার্টারের কোনোটি গোরুর গোয়াল, কোনোটি স্থানীয়দের ফসল রাখার গুদাম আবার কোনও কোয়ার্টার পরিণত হয়েছে মদ্যপানের নিরাপদ ঠিকানায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে ন্যুনতম একজন চিকিৎসক মোতায়েনের দাবিতে স্বাস্থ্য দফতরে বারবার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই হাসপাতালে একজন চিকিৎসক আগে মোতায়েন ছিলেন। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যেতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দ্রুত সেখানে অপর একজন চিকিৎসককে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। হাসপাতালটির এমন হাল নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
বিরোধীদের দাবি, শুধু গুন্নাথ হাসপাতালেই নয় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম মেরুদন্ড গ্রামীণ প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থাই কমবেশি এই রকমই। আর এই ঘটনার জন্য তাঁরা কাঠগোড়ায় তুলেছে রাজ্য সরকারকে। রাজ্যের শাসক দল গুন্নাথ হাসপাতালের দুরাবস্থাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেছে। বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি রাজ্যে পালাবদলের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপুল উন্নয়ন ঘটেছে।