বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও নীরব রামপুরহাট প্রশাসন, স্কুলগাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স সহ বহু যান চলছে রান্নার গ্যাসে
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নিয়মবহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে রামপুরহাট মহকুমা জুড়ে বহু গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা ছাড়াই অবৈধভাবে গ্যাস যুক্ত স্কুলগাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স চলছে। আইনে রান্না করার গ্যাস গাড়িতে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে খুদে পডুয়া, রোগী থেকে সাধারণ যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে গাড়িগুলি। পরিবহণ দপ্তরের নজরদারি সেভাবে না থাকায় এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ। আর লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
মুরারই থেকে ময়ূরেশ্বর, নলহাটি থেকে রামপুরহাট, মাড়গ্রাম সর্বত্রই অধিকাংশ গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। এগুলি সবই অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার যুক্ত আদ্যিকালের বিপজ্জনক মারুতি ভ্যানে বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কোথাও অবৈধ গ্যাস সংযোগে চলছে অ্যাম্বুলেন্স। পরিবহণ দপ্তরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিত্যদিন মহকুমাজুড়ে কয়েকশো গাড়ি এভাবে চলাচল করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে যে কোনও সময় গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
জ্বালানির বিকল্প হিসাবে গাড়িতে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবহণ দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিলিন্ডার রয়েছে। অথচ সড়কের ধারের গ্যারাজ থেকে অবৈধভাব গ্যাস সংযোগ করে হাজার হাজার গাড়ি চলছে।
জানা গিয়েছে, পরিবহণ দপ্তরের অনুমতি ও বৈধ গ্যাস ট্যাঙ্কি গাড়িতে ফিটিং করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ পরে। মোটা টাকা খরচের ভয়ে বেশিরভাগ গাড়ির মালিক কোনও গ্যারাজে সাধারণ পাইপ দিয়ে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সংযোগ করে নিচ্ছেন। এটা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, এতে সরকার রাজস্বও হারাচ্ছে। দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কোনও ইন্সিওরেন্স দাবি করা যাবে না। একই সমস্যায় পড়বেন যাত্রীরাও। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যাত্রীসাধারণ জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে আসছেন। এর আগে রোড সেফটি কমিটির মিটিংয়ে জেলাশাসক স্পষ্ট বলেছেন, গাড়িতে যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ করে চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এরপর পরিবহণ দপ্তর কয়েকদিন অভিযান করেন। কয়েকটি গাড়ি আটকে জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বর্তমানে সেই নজরদারি নেই। ফলে প্রতিদিনই অবৈধ গ্যাস সংযোগের প্রবণতা বাড়ছে।
প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস যুক্ত স্কুল ভ্যানগুলি অভিভাবকরাই ঠিক করেন। আর্থিক কারণে কয়েকজন অভিভাবক মিলে কম খরচে সেই গাড়ি ভাড়া করে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু টাকার থেকেও তাঁদের সন্তানদের জীবন মূল্যবান সেটা অভিভাবকদের বোঝা উচিত। তাঁরা অননিয়মকে প্রশয় দেওয়ায় এই সমস্যা বেড়েছে।
দমকল দপ্তরের এক আধিকারিকের মতে, এভাবে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রান্নার গ্যাস গাড়িতে ভরলে বিপদ যে কোনও সময় হতে পারে। স্থানীয় মানুষজন অবশ্য বলছেন, বড়সড় দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত পরিবহণ দপ্তরের ঘুম ভাঙবে না।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজিতে থাকে মূলত প্রোপেন বা বুটেন। সহজে বাতাসে মিশতে চায় না এই গ্যাস। তার উপর সামান্য বাতাসের সংস্পর্শে জ্বলতে সক্ষম এই গ্যাস। সেই সঙ্গে এই গ্যাসে অধিক পরিমাণ কার্বন তৈরি হয়। তাই এই গ্যাস গাড়িতে ব্যবহার করলে ইঞ্জিনে কার্বন জমে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।যদিও রামপুরহাট মহকুমার এআরটিও সৌমেন নন্দী বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে চলা গাড়িগুলির বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই অভিযানে নামা হবে।