• করিমপুরে মিলছে না রস, নলেন গুড়, শিউলির কাজে আয় অনেক কম, এই পেশায় আসছে না নতুন প্রজন্ম
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: ঠান্ডা পড়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত করিমপুরে খেজুর গাছ আগাছায় ভরে রয়েছে। দেখা নেই শিউলিদের। স্থানীয় লোকজনদের বক্তব্য, একসময়ে শীত পড়তে না পড়তেই শিউলিরা খেজুর গাছ কাটা শুরু করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই শিউলির অভাবে করিমপুরে খেজুরের রস সংগ্ৰহ হয় না। আগে যারা খেজুর রস সংগ্ৰহ করতেন, তাঁদের অনেকেই এখন বৃদ্ধ বা প্রয়াত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কেউ তেমন এই কাজে আগ্রহী নন। হোগলবেড়িযার শ্রীদাম বিশ্বাস বছর দশেক আগেও এলাকার প্রায় দেড়শো খেজুর গাছ কেটে তার থেকে প্রতিদিন সকালে রস সংগ্ৰহ করতেন। সেই রস ফুটিয়ে নলেন গুড় তৈরি করতেন। এখন তাঁর বয়স হয়েছে। গাছে ওঠার ক্ষমতা নেই। তাঁর ছেলে কিছুদিন এই কাজ করার পরে ছেড়ে দিয়েছেন। শ্রীদামবাবু বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় এতগুলো গাছে উঠে কলসি লাগানো ও ভোরবেলায় সেই কলসি নামানো খুব কষ্টের কাজ। ঠান্ডা যত বেশি হয় রস ও গুড়ের স্বাদ তত ভালো হয়। কিন্তু হাড়হিম করা শীতে গাছে ওঠা খুব ঝুঁকির। তবুও পেটের তাগিদে করতেই হতো। এখন অন্য কাজে বেশি রোজগারের ফলে এই কাজ কেউ করছে না। একই কথা জানান আর এক শিউলি নবীন মণ্ডল। তিনি বলেন, গাছ থেকে শুধু খেজুর রস সংগ্রহই নয়, প্রায় পনেরো লিটার রস ফুটিয়ে মাত্র এক কেজি গুড় তৈরি হয়। যার দাম সত্তর থেকে আশি টাকা। সেই রস ফোটাতে যে প্রচুর জ্বালানি লাগে, দামে আর পোষায় না। সেই সময় বনজঙ্গল, ঝোপঝাড়ের গাছ কেটে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন সেসবও নেই। ফলে জ্বালানির জন্য এত খরচ করে গুড় তৈরি  করে আর লাভ হচ্ছে না। যার জন্য খেজুর গাছ থাকলেও শিউলি মিলছে না। আরেক শিউলি নিমাই বিশ্বাস বলেন, এই কাজে পরিশ্রম বেশি অথচ রোজগার কম। তাই অনেকেই ছেড়ে দিয়ে কেউ মাঠে বা কেউ অন্য কাজ করছেন। করিমপুরের এক গুড় ব্যবসায়ীর অভিযোগ, আগে এলাকায় প্রচুর নলেন গুড় পাওয়া যেত। এখন মুর্শিদাবাদের কয়েক জায়গা থেকে গুড় আসে। চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ার জন্য গুড়ের দাম যেমন বেশি তেমনি গুড়ের মানও কমেছে। চিনি মেশানো নিম্নমানের ভেজাল গুড়ে বাজার ছেয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)