এক বছরের মধ্যেই বাবা-মায়ের মৃত্যু, ভাইকে নিয়ে ভাঙা ঘরে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: এক বছরের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়ে দু’জনে অনাথ হয়েছে পুজোর মুখে। দুর্গোৎসবে যখন পাড়ার অন্যান্য কচিকাঁচারা নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দে মেতেছিল, তখন পাঁচ বছরের ভাইকে নিয়ে মাথা গোঁজার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে বছর দশেকের দিদি। দুই একরত্তিকে রাতভর সিক্ত করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র বৃষ্টি, সেইসঙ্গে চোখের জলও। বাঁকুড়া-১ ব্লকের জগদল্লা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগাবাঁধ গ্রামে দুই শিশু বর্ণালি ঘোষ ও দেবজিৎ ঘোষের করুণ কাহিনি এখন পড়শিদের মুখে মুখে।
বাবা-মাকে হারালেও এতদিন বর্ণালি ও দেবজিতের মাথার উপর অন্তত পাকা ছাদ থাকার কথা ছিল। কারণ তাদের বাবা বিদ্যুৎ ঘোষের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকায় ছিল। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানির কারণে সেই বাড়ি তৈরি দেখে যাওয়ার ‘সৌভাগ্য’ বিদ্যুৎবাবুর হয়নি। বছরখানেক আগে কিডনি ও লিভারের অসুখে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। এবছর মহালয়ার দিন সকালে মুদিখানা দোকান থেকে ফেরার পথে গ্রামের গভীর নিকাশি নালার জলে পড়ে গিয়ে তাঁর স্ত্রী অঞ্জু ঘোষও মারা যান। সেইসঙ্গে বাড়ি পাওয়ার আশাও বিশবাঁও জলে চলে যায়। ওই দুই অনাথ শিশু যাতে বাড়ি পায়, তা দেখবেন বলে বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কল্পনা মণ্ডল রাজ্য সরকারের কোটায় বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাজনীতির আকাচাআকচি বর্ণালি-দেবজিৎ বোঝে না। তারা শুধু চায়, একটু মাথার গোঁজার আশ্রয়। তা সে যে সরকারই করে দিক না কেন। কারণ, আকাশের কোণায় মেঘ জমলেই ফের ভেজার আতঙ্কে ওই দুই শিশুর মুখ কালো হয়ে ওঠে।
এদিন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দু’জনে কাকার বাড়িতে আপন মনে খেলছে। বর্ণালির কাকা বিকাশ ঘোষ বলেন, ভাইজি রাজগ্রাম বিবেকানন্দ হিন্দু উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ভাইপো এবার গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। দাদা-বউদির মৃত্যুর পর আমরাই দু’জনকে দেখভাল করি। ঝড়বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িতে দু’জনকে রেখে দিই। শীতেও থাকতে বলেছি। তবে ওরা নিজেদের বাড়িতেই থাকতে চায়। সরকার ওদের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দিলে ভালো হয়।
নীলাদ্রিবাবু বলেন, দুর্নীতির কারণে এরাজ্যে আবাসের কাজ থমকে আছে। আমি ইতিমধ্যেই ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। কীভাবে তারা বাড়ি পেতে পারে সেব্যাপারে স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। শিশু দু’টির পড়াশোনা ও খাবারের দায়িত্ব সরকারেরই নেওয়া উচিত। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এলে ভালো হয়। পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, বিদ্যুৎবাবুর নাম দীর্ঘদিন ধরেই আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ আটকে দেওয়ায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যায়নি। রাজ্য সরকার টাকা ছাড়লে গৃহ নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। আমরা শিশু দু’টির পাশে আছি। - নিজস্ব চিত্র