১৮ হাজার উপভোক্তার সমীক্ষা ঝুলে, ঘরের আর্জি ফাইলবন্দি, মৃত্যু সাড়ে পাঁচ হাজার
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আবেদন করেছিলেন চাপড়ার মহিম শেখ। পেশায় চাষি মহিমের তিন ছেলে, দুই মেয়ে। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী মারা যান। সকলের সন্তানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। যখন ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন তখন মহিম ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। ভেবেছিলেন মাথার উপর ছাদ হলে সংসারটা একটু গোছানো হবে। কিন্তু কেন্দ্রের বঞ্চনায় সেই ঘর আজ অবধি মেলেনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মারা গিয়েছেন মহিম। ঠিক তারপরেই রাজ্য সরকারের তরফে বাড়ি দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। শুধু মহিম নন, নদীয়া জেলায় এমন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার উপভোক্তা ঘর পাওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে টাকা পাঠানো নিয়ে কেন্দ্র সরকারের গড়িমসির জেরেই এই ঘটনা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তাদের হদিশও মিলছে না অনেক সময়ে। এই সমস্ত সমস্যার কারণে নদীয়া জেলায় ১৭ হাজার ৭৭৭ জনের সমীক্ষা বাকি রয়েছে। তবে জেলায় ৯০ শতাংশ সমীক্ষার কাজ শেষ।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নতুন করে সমীক্ষার করা হচ্ছে। তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তাদের যোগ্যতা পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। কিন্তু এই মৃত উপভোক্তাদের বাড়িতে সমীক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিধি দলকে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তা যদি মারা যান তাহলে যোগ্যতার মানদণ্ড অনুযায়ী তার পরিবারের কাউকে সেই ঘর দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের বাকি সদস্যদের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিতে হবে। প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘তালিকায় নাম থাকা স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রী ঘর পাবেন। সে ক্ষেত্রে এনওসির প্রয়োজন পড়বে না। প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখালেই হবে। কিন্তু যদি স্ত্রীও মারা যান তাহলে এনওসি প্রয়োজন। কারণ পরিবারের একজনের নামে সেই ঘর রেজিস্টার্ড হবে। তাহলে বাকি সন্তানদের তাতে নো অবজেকশন জানাতে হবে। যদি এনওসি না দেয় তাহলে তালিকা থেকে তার নাম বাদ যাবে।’
কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সমীক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসছে। কারণ অনেকক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে যে, বাড়ির অন্য সদস্যরা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিতে রাজি হচ্ছেন না। সৌজন্যে পরিবারিক কলহ। এই নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। আবার এমনটাও দেখা যাচ্ছে, পরিবারের ছেলে সন্তানরা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। কিন্তু উপভোক্তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি অনেক দূরে। তাই সেখান থেকে এসে এনওসি দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না অনেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের সমস্যার কারণে নদীয়া জেলায় প্রায় ১২৯৮১ জনের সমীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। যার মধ্যে ৫৩২০ জন উপভোক্তা মারা গিয়েছেন। তাঁদের থেকে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখনোও পর্যন্ত ১৮১৮ জনের পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় নথি প্রশাসনের কাছে জমা করেছেন। কিন্তু তারপরেও ৭৬৬১ জনের সমীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। কারণ অনেকক্ষেত্রেই উপভোক্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় নথিও থাকছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৭৮ জনের সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে যোগ্য উপভোক্তা পাওয়া ১ লক্ষ ২৪ হাজার। অর্থাৎ জেলায় ৭৬ শতাংশ উপভোক্তাই বাড়ি পাওয়ার যোগ্য।