গভীর রাতেও জমজমাট কোচবিহার রাসমেলা, রাত জেগে যাত্রা দেখা, চলছে কেনাকাটা
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: দিনকয়েক হল কোচবিহারে হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। রাতে বেশ হিম পড়ে। শীতের আমেজ আসতে শুরু করেছে। তার মাঝেই শুরু হয়ে গিয়েছে মদনমোহনের রাসযাত্রা। আর এই রাসযাত্রা উপলক্ষ্যে গভীর রাতেও জমজমাট থাকছে মদনমোহন মন্দির ও রাসমেলা চত্বর। মদনমোহন মন্দিরে রাত জেগে চলছে যাত্রা দেখার পালা। আর রাসমেলায় অনেক রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার পালা।
মঙ্গলবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। মদনমোহন মন্দিরের গেট থেকে ভেসে আসছে যাত্রার অট্টহাসি। ভিতরে গিয়ে দেখা গেল মন্দির প্রাঙ্গণে ম্যারাপের নীচে প্রচুর মানুষের ভিড়। ত্রিপলের উপরে বসে পরম নিশ্চিন্তে তাঁরা যাত্রা দেখছেন। পালার নাম ‘কোহিনুর’। মাথাভাঙার দল। গভীর রাতে যাত্রা দেখতে এত ভিড়? মদনমোহন মন্দিরের কর্মীদের দাবি, প্রতিরাতেই যাত্রা দেখতে, কীর্তন শুনতে বহু মানুষের ভিড় তাঁদেরও ভালো লাগছে। রাত আরও কিছুটা গভীর হচ্ছে। মন্দির থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নজরে এল, সারাদিন ব্যবসার পর দোকানিদের কেউ তখন স্টোভ জ্বালিয়ে ভাত ফোটাচ্ছেন, কেউ আবার সেই গভীর রাতে সব্জি কাটছেন। অনেকে আবার খাওয়া শুরু করেছেন।
একটু এগতেই জেনকিন্স মোড়। সেখানে কিন্তু রাত ১২টাতেও বেশকিছু দোকান খোলা। বহু মানুষের আনাগোনা রয়েছে এলাকায়। ডানে ঘুরতেই সিলভার জুবিলি রোডের উপর থেকে কিছু দোকান উঠে গেলেও তখন কয়েকটি দোকান খোলা রয়েছে। সেখানে ক্রেতাও আছেন। রাসমেলা ময়দানেও বহু মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে আবার খাওয়াদাওয়া সেরে ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরে দেখবেন বলে রাসমেলায় এক চক্কর দিতে এসেছেন। এঁরা মূলত আশপাশের বাসিন্দা। একটু এগতেই দেশবন্ধু মার্কেটের মোড়ে দেখা গেল সিপিএমের বইয়ের স্টল তখনও খোলা। সেখানে বই রয়েছে। তবে কোনও নেতা-কর্মী নেই। স্টলের সামনে বসা এক দোকানি জানালেন, তাঁর দায়িত্বেই স্টল থাকে। তিনিই রাতে এখানে থাকেন। তাঁর দোকানে তখনও ক্রেতা রয়েছে। ফলে বিকিকিনির ব্যস্ততা রয়েছে সেখানেও। আশপাশে পুলিস মোতায়ন রয়েছে। তাঁরা রাতের রাসমেলার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। তেরঙ্গি মোড়ে গভীর রাতেও অনেক দোকান খোলা। বহু মানুষ রাসমেলা ঘুরে বাড়ি ফেরার পথে খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ও দেখা যাচ্ছে অনেকে রাসমেলার দিকে যাচ্ছেন। আলো, রাতের রাসমেলা দেখাই তাঁদের লক্ষ্য।
মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, এবারের যাত্রা, কীর্তনে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকছে। মঙ্গলবারের যাত্রা তো রীতিমতো জমে উঠেছিল। বহু মানুষ ছিল। স্থানীয় ও কলকাতার যাত্রা, কীর্তন, বাউলের অনুষ্ঠানগুলি আগামী দিনেও জমজমাট হবে বলে আশা করি। বুধবার রাতে বর্ধমানের টুম্পা চক্রবর্তী কীর্তন পরিবেশন করেন। সেখানেও বেশ ভিড় ছিল। এছাড়াও স্থানীয় যাত্রার তালিকায় রয়েছে ‘দেবী চৌধুরানি’, ‘রাজা কামতেশ্বর’। কলকাতার যুগান্তর অপেরার যাত্রা ‘বাসরভাঙা রাঙা বউ’, বিশ্ববার্তা অপেরার ‘অসুর নিধনে অগ্নিকন্যা’ যাত্রা পরিবেশন করবে। এছাড়াও ভাওয়াইয়া সঙ্গীত সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানও রয়েছে।