নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চাকরির বৈধ পোর্টালে জ্বলজ্বল করছে নামী আইটি সংস্থায় চাকরির বিজ্ঞাপন। বায়োডেটা জমা করলেই চাকরিপ্রার্থীকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারভিউয়ের দিনক্ষণ। দৌড়ঝাঁপের কোনও দরকার নেই! ‘গুগল মিট’ অ্যাপে অনলাইনে হবে ইন্টারভিউ। সেই মতো নির্ধারিত দিনে লগ-ইন করলেই দেখা যাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে বসে রয়েছেন পাঁচ-ছ’জন কর্তাব্যক্তি। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার! সংশ্লিষ্ট সংস্থার স্ট্যাম্প, লোগো ইত্যাদি সবই রয়েছে তাতে। যাবতীয় আয়োজন দেখে ঘূণাক্ষরেও টের পাওয়া মুশকিল যে সবটাই আসলে সাইবার প্রতারকদের পাতা ফাঁদ। আপনি যখন নতুন চাকরি পাওয়ার খুশিতে ভাসছেন, তখনই খাপ খুলবে প্রতারকরা। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার জন্য ‘জব সিকিউরিটি’ ও ‘ল্যাপটপ চার্জ’ বাবদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা দাবি করা হবে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, প্রথম বছর বেতনের সঙ্গে ওই টাকা ‘অ্যাডজাস্ট’ করে দেওয়া হবে। সরল বিশ্বাসে টাকা পাঠিয়ে দিলেই প্রতারকরা যাবতীয় যোগাযোগ ছিন্ন করে দেবে। দেশজুড়ে যখন চাকরির হাহাকার, তখন এভাবেই নয়া কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সাইবার দুষ্কৃতীরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এনিয়ে বিশেষ সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। প্রতারকদের এই কৌশল নিয়ে সমস্ত রাজ্যের পুলিসকে সতর্ক করে দিয়েছে তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, গৌরব শর্মা নামে হরিয়ানার এক যুবক সম্প্রতি এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম পোর্টালে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর তিনি প্রথম সারির তিনটি চাকরির পোর্টালে অ্যাকাউন্ট খোলেন। গত ১২ নভেম্বর তার মধ্যেই একটিতে চাকরির ‘অফার’ আসে। ‘প্লেসমেন্ট টিম’ তাঁকে ফোন করে। প্রাথমিক আলোচনার পর ইন্টারভিউয়ের তারিখ ঠিক হয়। ওই সফ্টওয়্যার কোম্পানির চেন্নাইয়ের অফিস থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে বলে গৌরবকে জানানো হয়। প্রথম খটকা লাগে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর। ‘জব সিকিউরিটি’ বাবদ ১ লক্ষ টাকা ও ‘ল্যাপটপ চার্জ ও জয়েনিং কিট’ বাবদ আরও প্রায় ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। অনলাইনে সেই টাকা পাঠিয়েও দেন গৌরব। এরপর আরও কয়েকটি খাতে লক্ষাধিক টাকা দাবি করা হলে সন্দেহ তীব্র হয়। তিনি আগের যাবতীয় লেনদেনের রসিদ চান। তখনই তাঁর ফোন নম্বর ব্লক করে দেয় প্রতারকরা।
লালবাজারের সাইবার বিভাগ জানাচ্ছে, এখন সাইবার প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’। এভাবে ২ হাজার কোটির বেশি টাকা প্রতারণা হয়েছে। লাগাতার সচেতনতা প্রচারে মানুষ কিছুটা হলেও সতর্ক হয়েছে। তাই অন্য মোড়কে নতুন প্রজন্মকে টার্গেট করছে প্রতারকরা। সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনও পোর্টালে ভরসা না রেখে কোম্পানির বৈধ সাইটে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা বিজ্ঞাপন যাচাই করে নিন। টাকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে।