সুকান্ত বসু , কলকাতা: ফৌজদারি মামলার চার্জশিটে দুই অভিযুক্তের নামের পাশে লিঙ্গ নিবন্ধে ‘মেল’ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। অথচ বুধবার রায়দান পর্বে যে দুই অভিযুক্তকে পুলিস আদালতের এজলাসে হাজির করাল, তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ স্বয়ং বিচারকের! চার্জশিটে মেল হিসেবে লেখা হলেও, এরা দু’জন তো ‘ফিমেল’! কলকাতা পুলিসের এহেন আজগুবি কাণ্ড দেখে চরম উষ্মা প্রকাশ করেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা রাউত। শুধু বিচারকের উষ্মাই নয়, আদালত কক্ষে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন এমনকী হাসিঠাট্টাও শুরু হয়ে যায়। শুধু লিঙ্গ বিভ্রাটই নয়, গোটা মামলায় পুলিসের তরফে জমা পড়া যাবতীয় নথিপত্রে এহেন অসংখ্য অসঙ্গতি মিলেছে। ‘মেল’ হিসেবে যে দু’জনকে এদিন আদালতে হাজির হতে হয়েছিল, তাঁদের একজন হলেন সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সভানেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক জাহানারা খান, অপরজন হলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মহিলা নেত্রী রুনু বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিটে নাম ছিল সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, গত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রতিকুর রহমান এবং আকাশ করের। মেল, ফিমেল বিভ্রাট ছাড়াও মামলায় মেলেনি উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণও। সবকিছু বিবেচনা করে বিচারক প্রত্যেককেই মামলা থেকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন।
রায়দান পর্বে বিচারকের মন্তব্য, সরকার পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি, তাই তাঁদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হল। রায়দানের পর পাঁচ মুক্তিপ্রাপ্তের তরফে আইনজীবী ইয়াসিন রহমান ও রাজেশ রায় বলেন,‘পুলিস যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল, এই ঘটনাই তার বড় উদাহরণ। না হলে কী করে দুই মহিলাকে চার্জশিটে বেমালুম পুরুষ সাজিয়ে দিল। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও হাস্যকরও বটেও।’ এই পর্বে মুক্তিপ্রাপ্তদের বক্তব্য, ‘পুলিস স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এই ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে, যার কোনও যৌক্তিকতা নেই। ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই মামলার রায়ের বিষয়ে কিছু জানা নেই। খোঁজখবর নেব।’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল বিভিন্ন দাবি‑দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ অবস্থান চলছিল। ওই ঘটনায় নিউমার্কেট থানার পুলিস স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বেআইনি জমায়েত, সরকারি কাজে বাধা সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় পুলিস মোট পাঁচ বাম নেতা‑নেত্রীকে অভিযুক্ত করে।
যদিও ওই ঘটনায় পুলিস কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। পরবর্তী সময় ব্যাঙ্কশালের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট পেশ করলে আদালত তাঁদের কোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। তার ভিত্তিতে ওই পাঁচজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। পরবর্তী সময় পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে শুরু হয় মূল মামলার বিচার। তাতেই ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’!