জীবনে সফল হওয়ার গল্প শোনালেন সুন্দরবন-বীরভূমের সুন্দরী, মিঠুরানিরা
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা জি প্লট, রামগঙ্গা। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে হতদরিদ্র কিছু পরিবার। ফসল ফলিয়ে কিংবা পশুপালন করে জীবন নির্বাহ তাঁদের। কিন্তু সে কাজ করে টাকাপয়সা বিশেষ আয় হতো না। তবে কয়েক বছর ধরে ছবিটা পাল্টেছে। ‘পুষ্টি বাগান’ তৈরি করেছেন তাঁরা। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক বা বেগুন, কচু, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সব্জি চাষ করছেন। পাশাপাশি হাঁস-মুরগিও পালন করছেন। কোথাও গোষ্ঠী তৈরি করে কোথাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে এগুলি। এখন আর্থিকভাবে শক্তপোক্ত হয়েছেন জি প্লটের শিবানী দাস, কমলা মণ্ডল কিংবা রামগঙ্গার মিঠুরানি গিরিরা। কোন ফসল কীভাবে চাষ করতে হবে, উৎপাদন বাড়ানো কীভাবে সম্ভব, সেসব নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া পালন করে কীভাবে আয় বৃদ্ধি সম্ভব, সরকারের থেকে কী ধরনের আর্থিক সাহায্য মিলতে পারে এসবও শিখেছেন। এখন ট্রেনিং পেয়ে তা গড়গড় করে বলে দিচ্ছেন তাঁরা।
একটি রিসার্চ সংস্থা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। জি প্লটের বাসিন্দা শিবানী, কমলারা বলেন, ‘রবি মরশুমে চাষ করে ১৮ হাজার ৭৫৫ টাকা আয় হয়েছে। হাঁস-মুরগি পালন করেও ভালো টাকা আয় হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার ম্যানগ্রোভ বসিয়েছেন তাঁরা। বুধবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় ‘সংলাপ ২০২৪’। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই সংস্থার আধিকারিকরা। সেখানে বীরভূম, সুন্দরবনের মহিলারা নিজেদের ‘শ্রীবৃদ্ধি’র অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ২০২১ সাল থেকে এই সংস্থার উদ্যোগে সুন্দরবন ও বীরভূমের প্রায় চার হাজার ২০০ পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে মানোন্নয়ন সম্ভব, তার প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন ওই প্রান্তিক মানুষরা। বীরভূমের মহম্মদবাজারের ফুলগড়িয়া গ্রামের আদিবাসী সুন্দরী মারান্ডি কিংবা চড়িচা গ্রামের মনীষা মারান্ডি জানাচ্ছেন, ব্লক অফিসে যেতে ভয় পেতাম। তারপর শিখলাম কীভাবে সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। সরকারের কাছ থেকে কী কী সাহায্য মেলে।’ মুরগি, হাঁস, ভেড়া, শুকর পালন করে সংসার চালাচ্ছেন তাঁরা। মনীষা বলেন, ‘একটা ছোট শুয়োর বিক্রি করে দু’হাজার টাকা আয় হচ্ছে। মুরগি, হাঁসের ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতে পারছি।’