• বিধানসভায় মমতার যে ওয়াকফ বিল আনছেন, তার বিষয়বস্তু জানতে ‘তৎপর’ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
    আনন্দবাজার | ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ আইন নিয়ে উত্তপ্ত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন। ওয়াকফ সংশোধনী নিয়ে যে বিলটি কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে পেশ করেছিল, তা আইনে পরিণত করানোর আগে সেটি নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তাই বিলটিকে আপাতত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেই কমিটিতে বিলটির বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। পাশাপাশিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্য সরকার ওয়াকফ সংক্রান্ত একটি বিল পেশ করবে এবং পাশ করাবে। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর ওই বিলে কী আছে, তা জানার চেষ্টা শুরু করেছে।

    পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় যে ওয়াকফ সংক্রান্ত বিল আসতে চলেছে, তা বুধবারই জানাজানি হয়েছে। কলকাতাস্থিত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর বিষয়টি নয়াদিল্লিকে জানায়। সূত্রের খবর, তার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই বিল সংক্রান্ত বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বুধবার ওই বিষয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। তার পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানতে চেয়েছে, ওই ওয়াকফ বিলের চূড়ান্ত বয়ান কী? কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে কি সংখ্যালঘুদের জন্য কোনও বিশেষ ঘোষণার সংস্থান রাজ্যের প্রস্তাবিত বিলটিতে রয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা সংখ্যালঘুদের জন্য কী কী ঘোষণা করবেন? মুখ্যমন্ত্রী কি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে চাইছেন? এই ধরনের বিবিধ প্রশ্নের জবাব চেয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক।

    কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেনেছে, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওই বিল বিধানসভায় পেশ হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মনে করা হচ্ছে, বিধানসভার কার্যবিবরণীর কমিটির আগামী বৈঠকেই বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে। অধিবেশনের আগে কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠকে বিলটি বিধানসভায় আনার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার। তার পরে বিলের খসড়া সব দলকে দেওয়ার কথা। ধানসভায় ওয়াকফ সংক্রান্ত বিলটি কোনও মুসলিম বিধায়ককে দিয়ে পেশ করানোর ভাবনা রয়েছে তৃণমূল পরিষদীয় দলের। বিজেপি পরিষদীয় দল আপাতত বিল সংক্রান্ত বিষয়ে নজর রাখছে। বিলটি বিধানসভায় আনা হলে তারা রাজ্য সরকারের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়েই নিজেদের বক্তব্য জানাবে।

    প্রসঙ্গত, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ নিয়ে তৃণমূল স্পষ্ট বিরোধিতার অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, ওই বিল সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী, গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। ওই বিল সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ‘বিভাজনের রাজনীতির অংশ’ বলে মনে করছে। তৃণমূল সংসদীয় দলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় ওই বিলটিকে ‘বিভেদকামী এবং অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। যৌথ কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকারে সঙ্গে লড়াই শুরু করেছেন আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক নাদিমুল হক। কল্যাণ কমিটির বৈঠকে সরকার পক্ষের সাংসদ এবং কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। তৃণমূলের বক্তব্য, ওই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের ‘পরিপন্থী’। বিলের বিরোধিতায় আরও সমর্থন আদায়ের জন্য তৃণমূল দলের এক সাংসদকে অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে সমন্বয় করার দায়িত্ব দিয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)