• আচমকা আবাসন ছাড়ার নির্দেশ, উদ্বেগে হলদিয়া বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসন ছাড়ার আকস্মিক নির্দেশে বিপাকে পড়েছেন সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। দূরে বাড়ি হওয়ায় ওই কর্মীদের সিংহভাগই চিকিৎসার জন্য বন্দরের আবাসনে ভাড়ায় থাকেন। অবসরের পরও আধুনিকমানের বন্দর হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা এবং ওষুধপত্রের সুবিধা পান কর্মীরা। রাতারাতি বন্দর আবাসন ছাড়ার নির্দেশে আতান্তরে পড়েছেন তাঁরা। নন-পোর্ট অর্থাৎ বাইরের আবাসিকদের জন্য ধার্য করা ভাড়া দিয়েই বন্দর আবাসনে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। তারপরও কেন তাঁদের বন্দর কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে ঘর ছাড়তে বলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 


    হলদিয়ার টাউনশিপে খালি আবাসনগুলি ভাড়ায় দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে নন-পোর্ট ও পোর্ট পেনশনারদের অনেকে ভাড়া নিয়ে থাকেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নোটিস পাঠালেও, নন-পোর্ট আবাসিকদের কোনও নোটিস দেয়নি। গত ১২নভেম্বর বন্দরের ‘এ’ টাইপ কোয়ার্টারের শুধু অবসরপ্রাপ্ত বাসিন্দাদের কাছে ওই নোটিস পাঠিয়ে একমাসের মধ্যে ঘর ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের আচরণকে ‘অমানবিক’ বলে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।


    জানা গিয়েছে, বন্দর আবাসন এলাকায় ৬৩৫টি ‘এ’ টাইপ কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়া রয়েছে। নন-পোর্ট অর্থাৎ বাইরের লোকজন থাকেন ৪৫৫টি কোয়ার্টারে। বাকি ১৮০টি কোয়ার্টারে থাকেন পোর্ট পেনশনাররা। খালি আবাসন ভাড়ায় দিয়ে বন্দরের প্রতি বছর প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আয় হয়। বন্দরের শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়েছে, প্রতি বছর বন্দরে গড়ে শতাধিক স্থায়ী শ্রমিক কর্মচারী অবসর নেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবাসনে থাকেন। অনেকেই আবার আবাসন ছেড়ে দেন, ফলে ঘর খালি পড়ে থাকে। গত এক দশকে প্রচুর কর্মী অবসর নিয়েছেন। বহু ঘরই খালি পড়ে রয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের একাংশ খালি কোয়ার্টার ভাড়ায় নিয়ে চিকিৎসার কারণে বসবাস করেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, অবসরপ্রাপ্তরা শারীরিক কারণে বাধ্য হয়েই ন্যায্য ভাড়া দিয়ে বন্দরের আবাসনে থাকেন। তাদের বক্তব্য, বাইরের লোকজন যদি বন্দর আবাসনে থাকতে পারেন, তাহলে বন্দরের অবসরপ্রাপ্তদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে কেন? বন্দরের কর্মী হিসেবে বরং তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। মাঝে প্রায় আড়াই বছর ধরে আবাসিকদের ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল না। মাসতিনেক শ্রমিক সংগঠনের চাপে পড়ে ভাড়া নেওয়া শুরু হলেও হঠাৎ করে উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হল।


    বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী স্বপন শেঠ, যদুপতি বড়ুয়া, কুমারেশ হালদার, শেখ ভানু বলেন, বছর তিনেক আগে বছরে ৪২হাজার টাকা ভাড়া ছিল। এখন তা বেড়ে ৫৪হাজার টাকা হয়েছে। বাড়তি ভাড়া দিয়ে কষ্ট করে হলেও চিকিৎসার জন্য থাকতে হয়। ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সভাপতি তথা সংগঠনের বন্দর ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ বিজলি অভিযোগ করেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশ বৈষম্যমূলক। ন্যায্য ভাড়া দিয়ে থাকা সত্ত্বেও নিজের সংস্থার কর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে বন্দর এই কাজ করছে। বন্দর হাসপাতালে এখন উন্নতমানের চিকিৎসা হয়, বহু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। পেসমেকার বসানো থেকে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হচ্ছে। হাতের নাগালে যাতে বয়স্করা ওই পরিষেবা পেতে পারেন সেজন্য বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছি। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, অবসরের পর কর্মীরা বড় জোর এক বছর আবাসনে থাকতে পারেন। কোনওভাবেই ৮-১০ বছর থাকতে পারবেন না। বন্দরের পলিসি মেনেই নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাই বাইরের লোকজন ভাড়ায় থাকলেও অবসরপ্রাপ্তরা আর থাকতে পারবেন না।
  • Link to this news (বর্তমান)