• শিশুর অন্ন জোগাতে এটিএম জালিয়াতি চাকরিহারা বঙ্কিমের
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: মাস কয়েক হল চাকরি গিয়েছে। সংসারে তীব্র অর্থকষ্ট। নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে। কিন্তু দুধের শিশু তো অভাব বোঝে না। খিদে ফেলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে পিতার কর্তব্য করতে গিয়েই ‘অপরাধ’ করা। এক এটিএম জালিয়াতকে পাকড়াও করে এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি তাকে বর্ধমান জেলার কালনা থেকে গ্রেপ্তার করে রানাঘাট থানার পুলিস। 


    ধৃতের নাম বঙ্কিম মণ্ডল। কালনা থানা এলাকার কৃষ্ণদেবপুরের বাসিন্দা সে। অর্থ কষ্টে জর্জরিত সংসারকে টেনে দাঁড় করাতে আর ছোট্ট সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে এটিএম কার্ড চুরির উদ্দেশ্য নিয়ে রানাঘাট এসেছিল সে। এই ঘটনা প্রায় দিন ১৫ আগের। আনুলিয়ার কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ধৃত। উদ্দেশ্য ছিল, এটিএম ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারেন না এমন কোনও ব্যক্তিকে পেলে, তাঁর সাহায্য করার নাম করে পিন জেনে কার্ড হাতিয়ে নেওয়া। খানিক বাদে মিলেও যায় এমন একজন। রানাঘাটের সাটিগাছার বাসিন্দা প্রকাশ ভট্টাচার্য এটিএম ব্যবহার করে টাকা তুলতে পটু নন। তিনি এটিএমে আসতেই সুযোগ চলে আসে বঙ্কিমের কাছে। কার্ড ব্যবহার করে সে টাকা তুলে দেয় ওই প্রৌঢ়কে। এরপর তার পকেটে থাকা একটি অন্য কার্ডের সঙ্গে বদলে দেয় প্রকাশবাবুর কার্ডটি। ওই প্রৌঢ় এটিএম থেকে চলে যাওয়ার পরেই বঙ্কিম দেখতে পায়, কার্ডে বেশ মোটা অংকের টাকাই রয়েছে। আনন্দে সোজা কালনা চলে যায় অভিযুক্ত। এরপর কালনা বাস স্ট্যান্ডের একটি এটিএম থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে নেয় সেই কার্ড ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, কার্যসিদ্ধি হওয়ার আনন্দে এবং খানিক অপরাধবোধ থেকে পুজো দিতে চলে যায় তারাপীঠ! টাকা তুলতে সেখানেও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে বঙ্কিম। ততক্ষণে অবশ্য থানায় ডায়েরি হয়েছে। পুলিস ট্র্যাক করাও শুরু করেছে। পরবর্তীতে কালনা ফিরে আরও একাধিক বার ওই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার চেষ্টা করে বঙ্কিম। যদিও ততক্ষণে কার্ড ব্লক করা হয়ে গিয়েছে। ফলে ব্যর্থ হয় তার প্রচেষ্টা।


    মঙ্গলবার কালনা থানা এলাকার কৃষ্ণদেবপুরে হানা দেয় রানাঘাট থানার পুলিস। এটিএম জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্কিম মণ্ডলকে। তাকে বুধবার রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ দিনের পুলিস হেফাজত মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে, নিজের সংসারের অর্থকষ্ট, কাজ চলে যাওয়া এবং সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে অপরাধের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে ধৃত। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া একটি খারাপ এটিএম কার্ডের সঙ্গে ওই প্রৌঢ়ের কার্ড সে বদল করেছিল বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছে। বঙ্কিমের করুণ কাহিনি এবং অনুতাপ বোধ দুঁদে উর্দিধারীদেরও আবেগপ্রবণ করে দিয়েছে। এদিকে, নিজের এটিএম কার্ড ফিরে পেয়ে খুশি সাটিগাছার বাসিন্দা প্রৌঢ়। সাকুল্যে ২০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়া ছাড়া বাকি অর্থ ফিরে পেয়েছেন তিনি।
  • Link to this news (বর্তমান)