• নিজের বিয়ে আটকে ‘বীরাঙ্গনা’র সম্মান পেল কৃষ্ণনগরের মারিয়াম
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের মহারানি জ্যোতির্ময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া মারিয়াম খাতুন। তার বয়স মাত্র ১৪। বাড়ি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত ঝিটকেপোতা এলাকায়। স্কুল জীবনে চার দেওয়ালের গণ্ডির বাইরের দুনিয়া তখনও তার কাছে ঝাপসা। অথচ তার আগেই খুদে মারিয়ামকে সংসার জীবন ঢুকিয়ে দিতে তৎপর হয়েছিল বাড়ির লোকজন। অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা, বাইরের ঝাপসা দুনিয়ায় আলো খোঁজার কৌতূহল তখন তার মধ্যে কুঁড়ি হয়ে ফুটছে। বিয়ে হলে সেই কুঁড়ি যে অসময়ে ঝরে পড়বে, তা উপলব্ধি করেছিল বছর চোদ্দোর ওই ছাত্রী। বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। শেষপর্যন্ত পরিবারের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়ায় সে। নিজের হাতেই নিজের বিয়ে ভেঙে বীরত্বের নজির গড়ে। খুদে মারিয়ামের সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যার জন্য বীরাঙ্গনার সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে কৃষ্ণনগরের ছাত্রীকে। বৃহস্পতিবার কলকাতার রবীন্দ্রসদনে এক সরকারি অনুষ্ঠানে এই সম্মান তাকে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উপহারস্বরূপ পাঁচ লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়েছে। যা আগামী দিনেও মারিয়ামের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জেদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 


    কৃষ্ণনগরের সদরের মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন নিয়মিত বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন স্কুলে এই নিয়ে শিবির করছি।‌ মারিয়াম খাতুন জেলার বাকি স্কুল ছাত্রীদের কাছেও উদাহরণ হয়ে থাকবে। এই সচেতনতা প্রচারের লক্ষ্যই হল গ্রামে গ্রামে মারিয়ামের মতো ছাত্রীদের তৈরি করা। যাতে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ওরা নিজেরাই রুখে দাঁড়ায়।’


    কৃষ্ণনগরের মহারানি জ্যোতির্ময়ী বালিকা বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা সুচিত্রা গঙ্গোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মারিয়াম শান্তপ্রকৃতির অত্যন্ত ভালো মেয়ে। কয়েক মাস আগে আমাদের কাছে এসে বিয়ের বিষয়টা জানায়।‌ এই লড়াইটা যত না আমাদের ছিল, তার থেকেও বেশি মারিয়ামের ছিল। সেই লড়াইয়ে ও জয়ী হয়েছে। যার জন্য বীরাঙ্গনা সম্মান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আমাদের কাছেও তা অত্যন্ত গর্বের। আমরা চাই মারিয়াম জীবনে অনেক বড় হোক।’


    জানা গিয়েছে, মারিয়ামের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার বাবা ধর্মীয় বই বিক্রি করে সংসার চালান। অসময়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বড় কারণ হল এই আর্থিক দুরাবস্থা। সেপ্টেম্বর মাসেই মারিয়ামের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। প্রথমদিকে বাড়িতে প্রকাশ্যে আপত্তি জানাতে পারেনি সে। স্কুলের এক শিক্ষিকা এবং তার বন্ধুকে বিষয়টি জানায়। তারপর স্কুলের তরফ থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়। প্রশাসন ও চাইল্ড হেল্পলাইন যৌথভাবে তদারকি করে। শেষপর্যন্ত মারিয়ামের মদতেই প্রশাসন বিয়ে আটকাতে সফল হয়। এক আধিকারিকের কথায়, ‘নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই তা আটকানো হয়। কিন্তু সাধারণত কোনও নাবালিকা এসে নিজের বিয়ের আটকানোর কথা আমাদের জানায় না। এটা অবশ্যই ওই নাবালিকার সাহসিকতার নির্দশন।’ আগামী দিনে মারিয়াম বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা দিয়েছে প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে। আশপাশে যেখানেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখবে তৎক্ষণাৎ সে রুখে দাঁড়াবে।
  • Link to this news (বর্তমান)