• ট্যাব-কাণ্ডে বেহাত হওয়া ৫০ লক্ষ টাকা ‘ব্লক’ করল পুলিস
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও শিলিগুড়ি: ট্যাবকাণ্ডে বেহাত হওয়া ৫০ লক্ষ টাকা ‘ব্লক’ করল রাজ্য পুলিসের যৌথ তদন্তকারী টিম। ফ্রিজ করা হয়েছে ১১৯০টি অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে পড়ুয়াদের টাকা স্থানান্তর করেছিল জালিয়াতরা। ভুয়ো নথি দিয়ে এগুলি খোলা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। এই টাকা সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতে  আবেদন করা হয়েছে। আদালত নির্দেশ দিলেই তার কপি ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো হবে। ট্যাব কেলেঙ্কারিতে অন্যতম মাস্টার মাইন্ড রবীন্দ্র প্রসাদ সিং সহ বিভিন্ন জেলা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই নিয়ে রাজ্য পুলিস এখনও পর্যন্ত ২১ জনগ্রেপ্তার করল। এই পর্বেই বৃহস্পতিবার ট্যাবকাণ্ডে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে ২ কোটি পড়ুয়াকে ট্যাবের টাকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২ কোটি টাকার মতো জামতাড়া গ্রুপ ‘অসাধু’ কারবার করেছে। ঝাড়খণ্ড-বিহারের গ্যাং। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শেল্টার থেকে এরা আসছে। শপিং মলে আড্ডা মারছে, গেস্ট হাউস-হোটেলে থাকছে। মলগুলিকে সতর্ক থাকার আবেদন করেছি। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা খবর পাচ্ছি, এরা শপিং মলে ফেক কারেন্সি নিয়ে আসছে। মল কর্তৃপক্ষকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। একইভাবে রাজীব কুমারকে (রাজ্য পুলিসের ডিজি) আরও কড়া নজরদারি রাখার জন্য বলা হয়েছে।   


    ট্যাবকাণ্ডের তদন্তে নেমে অফিসাররা জানতে পারেন, কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির নথি গিয়েছে জালিয়াতদের হাতে। অন্যের নথি ব্যবহার করে খোলা হয়েছে জাল অ্যাকাউন্ট। বিভিন্ন জেলার একাধিক সিএসপি এখন তদন্তকারীদের নজরে। যে নথি দিয়ে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল, সেগুলি কোন কোন সিএসপি থেকে টাকার বিনিময়ে কিনেছিল প্রতারক চক্রের পান্ডারা, সেটাই ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে।  পূর্ব মেদিনীপুরে ধরা পড়া ব্যক্তিদের জেরা করে জানা যায়, এই গ্যাংটি কিষানগঞ্জের বাসিন্দা রবীন্দ্রর কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করত। সে চোপড়ায় বিভিন্ন ব্যক্তির আধার, প্যানসহ একাধিক নথি পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনা জানাজানি হতেই সে কিষানগঞ্জ থেকে পালিয়ে ভক্তিনগরে আশ্রয় নেয়। সূত্র মারফত খবর পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে যৌথ তদন্তকারী দলের সদস্যরা। ডায়মন্ডহারবার, উস্তি, সাঁকরাইল থানায় ট্যাব কেলেঙ্কারিতে আরও তিনজন ধরা পড়েছে। 


    তদন্তে উঠে আসছে ট্যাবের টাকা স্থানান্তর করার জন্য যে নতুন অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল সেটি বেশি পুরনো নয়। কোনটির বয়স দুই মাস আবার কোনটির একটু বেশি। তদন্তকারীদের অনুমান জালিয়াতির পরিকল্পনা মাস দুয়েক ধরে চলছিল। তখন থেকেই নথি জোগাড় করে অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ চলছিল। তবে যেভাবে ভুয়ো নথি জমা করে একের পর এক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাতে ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য কোনও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে নথি জমা পড়েছে ব্যাঙ্কের তরফে সেটি যাচাই করা হয়নি। অফিসাররা জানতে পারছেন সমস্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য চাপ দেওয়া হয় কর্মীদের। সেক্ষেত্রে নথি যাচাই করে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্যই জালিয়াতরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। মূল পরিকল্পনাকারীরা ঘটনার পরই রাজ্য ছেড়েছে। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। ধৃতদের জেরা করে তাদের ডেরা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)