• চারটি প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের, ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
    আনন্দবাজার | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • আবাস প্রকল্পে প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ১৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড়ার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আরও প্রায় পাঁচ লক্ষ নতুন উপভোক্তাকে যুক্ত করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে তাঁরাও অর্থ পেতে শুরু করবেন। সব মিলিয়ে এ দিন চারটি প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। লক্ষ্মীর ভান্ডার, আবাস ছাড়া সেই তালিকায় রয়েছে বিধবা ভাতা এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ভাতা প্রকল্প। রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, কেন্দ্র স্বল্পমেয়াদী কোনও প্রকল্প নিলে রাজ্য তা গ্রহণ করবে না।

    বিভিন্ন অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী আবাস এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। আবাস প্রকল্পের বরাদ্দ নিজেরা দেওয়ার কথা গত লোকসভা ভোটের আগেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই মতো শুরু হওয়া উপভোক্তা তালিকার পুনর্যাচাই প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ লগ্নে। মমতা জানান, আবাসের মূল তালিকার ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তির বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আরও ১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরির ওই টাকা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ১২ লক্ষ উপভোক্তা প্রথম কিস্তির টাকা পাবেন। মমতা জানিয়েছেন, দু’টি কিস্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ফলে ৬০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পাবেন প্রত্যেক উপভোক্তা। মমতার কথায়, “রাজ্য ৪০% টাকা দেয়, তার পরেও প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প কেন? আমি তো আমার নামে কোনও প্রকল্প করিনি। ১০ বছর পরে আমি মারা গেলেও, কেউ আমার মূর্তি তৈরি করুক, তা চাই না।” মমতার সংযোজন, “তিন বছর টাকা দেয়নি। কেন্দ্রের থেকে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা পাই। এ বার থেকে এই প্রকল্পের নাম ‘বাংলার বাড়ি’। ১২ বছরে ৫০ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি। টাকা আমাদের, নামও আমাদের।” প্রসঙ্গত, আবাস-অভিযোগের মধ্যে প্রকল্পের নাম বদলও একটি বিষয় ছিল। এ দিন সরকারি ভাবেই সেই নাম বদল ঘোষণা হল। মমতা জানান, ১২ লক্ষকে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার পরে আরও ২৪ লক্ষ উপভোক্তা বাকি থাকবেন। তাঁদেরও দফায় দফায় টাকা দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “দু’তিন বছর সময় নিচ্ছি।”

    মমতার ঘোষণা, লক্ষ্মীর ভান্ডারে আরও ৫ লক্ষ ৭ হাজার উপভোক্তাকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। যাঁরা আজীবন ভাতা পাবেন। এখন ওই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ২.২১ কোটি। তাতে এতদিন পর্যন্ত সরকারের মোট খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। নতুন ৫.০৭ লক্ষের জন্য অতিরিক্ত আরও প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা খরচ হবে। মমতার কথায়, “ভোটের কথা মাথায় রেখে অন্যান্য রাজ্য করেছে। কিন্তু তা পেতে গেলে প্রচুর শর্ত পূরণ করতে হয়। আমাদের রাজ্যে কোনও শর্ত নেই। প্রত্যেকের জন্য প্রকল্প উন্মুক্ত। এমনকি, পরিবারে চারজন মহিলা থাকলেও প্রত্যেকে টাকা পাবেন।”

    এ দিন ঘোষণা হয়েছে, বিধবা ভাতা আরও ৪৩ হাজার ৯০০ জনকে দেওয়া হবে ডিসেম্বর থেকেই। এখন তাতে উপভোক্তা সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ ৩২ হাজার। তাতে খরচ হত ২৪৫০ কোটি টাকা। নতুন অন্তর্ভুক্তির ফলে খরচ বেড়ে হবে তিন হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, বিশেষ ভাবে সক্ষম প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ উপভোক্তা ভাতা পেতেন মোট ৯০০ কোটি টাকার। এখন আরও ১৯ হাজার নতুন উপভোক্তা তাতে যুক্ত হল। নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে প্রায় ১.০৮ কোটি উপভোক্তাকে একটি কিস্তির ২৯৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে এ বছর ৫৮৫৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। কৃষকদের মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১.২৭ লক্ষ উপভোক্তাকে দেওয়া হয়েছে ২৫৪৪ কোটি টাকা। মমতার কথায়, “আমি যা কথা দিই, তা রাখি।” যদিও আর্থিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, আয়ের সীমারেখা ছাড়া সার্বিক ভাবে প্রকল্পগুলি চালানো কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা খতিয়ে দেখা উচিত সরকারের।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)