• ট্যাব কাণ্ডের পরে রাজ্য জুড়ে নাকা তল্লাশির নির্দেশ
    আনন্দবাজার | ২২ নভেম্বর ২০২৪
  • ট্যাব-কাণ্ডের পরে গোটা রাজ্যের সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নাকা তল্লাশি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, মানুষকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে। ট্যাব-কাণ্ডের নেপথ্যে ‘জামতাড়া গ্যাং’ কাজ করছে বলে জানিয়ে রাজ্যের শপিং মলগুলিকেও সতর্ক করেছেন মমতা। এর নেপথ্যে রাজনৈতিক যোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার। চলতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাম না করেও, সেখানকার পরিস্থিতিতে সীমান্ত সুরক্ষার উপর বাড়তি জোর দেওয়ার দাবি তুলেছেন মমতা। প্রসঙ্গত, এ দিনই কন্যাশ্রী প্রকল্পের বরাদ্দ যাতে বেহাত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দফতরও।

    মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “১৬০০ কোটি টাকার ট্যাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২ কোটি টাকার চুরিতে জামতাড়া গ্যাং কাজ করেছে। ঝাড়খণ্ড-বিহারের চক্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তারা আছে। বিভিন্ন শপিং মলে আড্ডা দিচ্ছে, নকশা তৈরি করছে। গেস্টহাউসে ভাড়া নিচ্ছে। সাংবাদিক-রাজনৈতিক লোকেদের সঙ্গেও মিশছে।” তাঁর সংযোজন, “কয়েকদিন আগে একটা মলে আগুন লেগেছিল। আগেও একবার লেগেছিল। অনেকগুলো তথ্য পেয়েছি। জাল নোট আসছে। সব শপিং মল বা ব্যবসা কেন্দ্র খারাপ নয়। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।”

    মমতার নির্দেশ, ‘‘শুধু সিসিটিভিতে হবে না। যারা চুরি-ডাকাতি করে, তারা সেগুলো এড়িয়ে যায় অনেক সময়। জেলায় জেলায় নোডাল অফিসার থাকবেন একজন করে। যিনি প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট দেবেন।’’

    মমতার অভিযোগ, সীমান্তপারের দেশে টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে। যে ভাবে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার তা হয়নি। ফলে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সীমান্ত আমাদের হাতে নেই, তা কেন্দ্রের হাতে। জাল নোট কেন আসছে? কেন্দ্র কেন পদক্ষেপ করছে না? রাজ্য-জেলার সব সীমানায়, কমিশনারেটের সীমানায়, সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত বাধ্যতামূলক ভাবে নাকা তল্লাশি হবে। মানুষের থেকে সহযোগিতা থাকবে। আমার গাড়িতে তল্লাশি হলে খুশি হব।” ট্রেনের মাধ্যমেও রাজ্যে যে অস্ত্র ঢুকছে, সেই অভিযোগ করে মমতার নির্দেশ রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বৈঠক করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।

    জাল নোট থেকে বিদেশি তহবিল, সীমান্ত সুরক্ষা থেকে গরু পাচার—সব ক্ষেত্রে দায়িত্ব যে কেন্দ্রের, এ দিন তা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে কেন্দ্র যেন আরও তৎপর হয়, তা নিয়ে ক্যাবিনেট সচিব এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “পাসপোর্ট ঠিক কি না, আমি কী করে জানব? এটা তো কেন্দ্রের দায়িত্ব। সীমান্ত দিয়ে কে ঢুকছে, গরু পাচার কে করছে, তা তো বিএসএফ-এর দায়িত্ব। বিদেশি তহবিল তো কেন্দ্রের দায়িত্বে। কী করে এখানে তা হচ্ছে? রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও তো কেন্দ্রের হাতেই। আমাদের সহযোগিতা পাবে ভাল কাজ করলে।”

    এ দিনই শিক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, কন্যাশ্রী পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার সময়ে স্কুলের নিজস্ব পাসওয়ার্ড বদলে ফেলে নতুন পাসওয়ার্ড দিতে হবে। নিয়মিত আপডেট করতে হবে সফটওয়্যার। উপযুক্ত অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। কাজ হওয়ার পরে ‘লগ আউট’ বাধ্যতামূলক। প্রসঙ্গত, ১৩ বছর বয়সী যে সব পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তারা সবাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় পড়বে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্টে বছরে ১০০০ হাজার টাকা ঢোকে। ১৮ বছর হয়ে যাওয়ার পরে তার যদি বিয়ে না হয়, ‘কন্যাশ্রী-টু’ প্রকল্পে তাঁর অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা পৌঁছে যায় সরকারের তরফে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)