বাগজোলা খাল লাগোয়া বিধাননগর পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দপল্লিতে বৃহস্পতিবার ভোরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেই সময়ে চা খেতে বেরিয়ে বাড়ির অদূরেই বেপরোয়া অ্যাপ-ক্যাবের ধাক্কায় মৃত্যু হয় সন্তোষ ব্রহ্ম (৫০) নামে স্থানীয় বাসিন্দা এক প্রৌঢ়ের। পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার পরে তিনি বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিলেন। কেউ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। পরে নিউ টাউন থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সন্তোষকে তুলে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, সন্তোষকে ধাক্কা মেরে বেপরোয়া চালক গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। তার খোঁজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা শুনেছেন, ওই গাড়িটি প্রথমে একটি মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। সেই বাইকচালক গাড়িটিকে তাড়া করেছিলেন। গাড়িটি পালাতে গিয়েই সন্তোষকে ধাক্কা মারে বলে মনে করছেন স্থানীয়েরা। মৃতের স্ত্রী মিনতি ব্রহ্ম জানান, সন্তোষ মাটি কাটার কাজ করতেন। প্রতিদিন ভোরে উঠে পাড়ার দোকানে চা খেতে যেতেন। এ দিনও গিয়েছিলেন। তার পরেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। মিনতি বলেন, ‘‘আমি পরিচারিকার কাজ করি। এক প্রতিবেশী কাজের বাড়িতে গিয়ে খবর দেন যে, আমার স্বামীর দুর্ঘটনা ঘটেছে, রাস্তায় পড়ে রয়েছেন। দ্রুত ওই জায়গায় পৌঁছই। তবে, তত ক্ষণে পুলিশ ওঁকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে চলে গিয়েছিল। পরে স্বামী মারা যান।’’
এ দিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ করেছেন মৃতের পরিজন, প্রতিবেশীরা। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে প্রকাশ বিশ্বাস নামে এক প্রতিবেশীর কাছে ফোন আসে। জানানো হয়, সন্তোষকে গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে রাস্তা অবধি যেতে প্রকাশের খানিকটা সময় লাগে। প্রকাশ জানান, ফোনে খবর পেয়ে রাস্তায় গিয়ে তিনি দেখেন, সন্তোষ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গোঙাচ্ছেন। রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ বলেন, ‘‘আমি বার বার রাস্তার লোকজনকে অনুরোধ করলাম, সন্তোষদাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে। কিন্তু পুলিশি হয়রানির অজুহাতে কেউ এগিয়ে এলেন না। ওঁকে রাস্তায় শুইয়ে রেখেই ওঁর স্ত্রীকে খবর দিতে যাই। ফিরে এসে জানতে পারি, পুলিশ সন্তোষদাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো উনি বেঁচে যেতেন।’’
নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা সরণিতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলাচলের জেরে বিভিন্ন সময়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাগজোলা খালের পাশের ওই রাস্তায় এমন ঘটনা আগে ঘটেনি বলেই স্থানীয়দের দাবি। তবে, গভীর রাতে ওই রাস্তাতেও বেপরোয়া বাইক কিংবা গাড়ি চলে বলে অভিযোগ তাঁদের। সেখানে অবিলম্বে স্পিড ব্রেকার বসানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়েরা।