হাওড়ার নাজিরগঞ্জে অবস্থিত পোদরা ঘাট ওই এলাকার জলপথ পরিবহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ঘাট দিয়ে নিত্যদিন আট-ন’হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় হাওড়া থেকে প্রচুর মানুষ জলপথে মেটিয়াবুরুজ যেতেন হাটের ব্যবসা করতে। তাঁদের অন্যতম ভরসা ছিল পোদরা ঘাট। কিন্তু নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় এই ঘাট। নতুন জেটি তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। উঠে এসেছে অসাধু ভুটভুটি চক্রের কথা। অভিযোগ, এই চক্রই সরকারি লঞ্চ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, লঞ্চ নয়, এই ঘাট থেকে চলবে ভুটভুটি! কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, প্রশাসনের উদ্যোগের পরেও পোদরা ঘাটে লঞ্চ পরিষেবা চালু সম্ভব হয়নি। অবশেষে জেটির কাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয়েরা।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পোদরা ঘাটকে কেন্দ্র করে একটি অসাধু চক্র তৈরি হয়েছিল। কয়েক জন এই ঘাটে অবৈধ ভাবে ভুটভুটি পরিষেবা চালু করেন। মুনাফার লোভে এই ভুটভুটিতে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতেন মালিকেরা। শুধু তা-ই নয়, মালপত্র এবং অন্য জিনিসও একই ভুটভুটিতে তুলে আসা-যাওয়া করা হত। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা আদালতে মামলা করায় ২০০৫ সালে ভুটভুটির চলাচল বন্ধ করে দেন তৎকালীন জেলাশাসক। এর পরে ২০০৯ সালে জেটিঘাট তৈরির ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়। ২০১৩ সালে তেলকল ঘাটের একটি জেটি নিয়ে এসে ফেরিঘাট তৈরির কাজ শুরু করে অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ সংস্থা। কিন্তু তা শেষ করা যায়নি। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে মাঝপথেই বন্ধ করতে হয় জেটি তৈরির কাজ। কিন্তু আবার ওই ঘাটে অবৈধ ভাবে শুরু হয়ে যায় ভুটভুটি চলাচল। সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভুটভুটি-রাজ চলত পোদরা ঘাটে। কিন্তু ২০১৩ সালে এই ঘাটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রিবাহী একটি ভুটভুটি উল্টে যায় গঙ্গায়। তিন জনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সাঁকরাইলের পোদরা গঙ্গার ঘাট।
স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ মণ্ডলের কথায়, ‘‘এই ঘাটে লঞ্চ পরিষেবা চালুর জন্য আগেও কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভুটভুটি মালিকেরা ঝামেলা করে সেই কাজ বন্ধ করে দেন। এই এলাকায় তাঁদের প্রভাব ছিল অনেক।’’ যদিও পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোদরা ঘাটে ফেরি পরিষেবা চালানোর কথা ঘোষণা করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে ফলক লাগানো হয়। তবে জেটি তৈরির কাজ থমকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আটকে থাকা কাজ শুরু হল।
জেটি তৈরির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব নায়েক জানান, দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি নতুন জেটি তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। পোদরা ঘাটে আধুনিক মানের ৪১ মিটার লম্বা ও ২০ মিটার চওড়া জেটি তৈরি হচ্ছে। সেখানে যাত্রীদের জন্য প্রতীক্ষালয়, টিকিট কাউন্টার, স্মার্ট গেট থাকবে।