• ‘ফেস্টিভ্যালের কাজ সারা বছর ধরে করা প্রয়োজন’, বললেন গৌতম
    এই সময় | ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • দেবলীনা ঘোষ

    আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (কিফ)। যার চেয়ারপার্সন গৌতম ঘোষ। আবার তাঁর ইন্দো–ইতালিয়ান ছবি ‘পরিক্রমা’ মুক্তি পাবে আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে। ইংরেজি, হিন্দি আর ইতালিয়ান ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি। এই দুই নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন পরিচালক। ছবিটি ‘কিফ’–এ এশিয়ান প্রিমিয়ার করবে।

    ‘এই বয়সে কোনও কম্পিটিশনে ছবি পাঠাতে ইচ্ছে করে না আর। অনেক হয়েছে। অনেক বছর ধরে কাজ করছি। তাই আর কোনও ছবিই কম্পিটিশনে পাঠাতে ভালো লাগে না। ‘পরিক্রমা’–র এশিয়ান প্রিমিয়ারটা আমরা শহরে, এই চলচ্চিত্র উৎসবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’, বলছেন পরিচালক।

    ছবির গল্প তাঁর বন্ধুর লেখা। ইতালিয়ান ভাষায় লেখা এই গল্পটি তিনি পড়েছিলেন ইংরেজিতে, ‘দ্য স্টোরি অফ লালা’। ‘আমি আমার বন্ধুকে বলি, এই গল্পটা নিয়ে একটা ছবি করতে চাই। তবে ফ্রি অ্যাডাপটেশন করব। গল্পটা এক গ্রামের বাচ্চার। তার বাবা জমি খুইয়েছে। সে চায় বড় হয়ে বাবাকে জমি কিনে দিতে। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক সামাজিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। এই গল্পটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। একজনের জমি হারানোর অনেক কারণ থাকে। যেটা ভিস্যুয়ালি খুব ইন্টারেস্টিং হবে, সেটাকেই তুলে ধরব ঠিক করি’, বক্তব্য গৌতমের।

    এই বাচ্চাটির সঙ্গে ছিল নর্মদা নদী পরিক্রমার গল্পও। বহু বছর ধরে নর্মদা নদীর এক কূল ধরে পরিক্রমাবাসীরা হেঁটে যান। আবার অন্য কূল ধরে হেঁটে ফিরে আসেন। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় জলাশয় শুকিয়ে গিয়েছে। কোথাও বাঁধ হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গাটুকু বাসে করে গিয়ে আবার হাঁটেন তাঁরা।

    পরিচালক বলছেন, ‘আমি এমন একটা চরিত্র তৈরি করি যে পরিচালক আর লেখক। সে এনভায়রনমেন্টাল ডিসপ্লেসমেন্ট নিয়ে কাজ করে। এই চরিত্রটায় অভিনয় করেছেন মার্কো লিওনার্দি। তাঁর সহকারীর চরিত্রটি করেছেন চিত্রাঙ্গদা সিং। তার সঙ্গে দেখা হয় এক হকার বয়ের। যে অল্প ইতালিয়ান বলে মন জয় করে সেই পরিচালকের। পরিচালক তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তার মাতৃভূমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। তখন সে ঠিক করে এই বাচ্চাটির গল্প আর পরিক্রমার গল্প একসঙ্গে বলবে। এই দুইয়ের মধ্যে যেন মিল খুঁজে পায় সে। এ ভাবেই গল্পটাকে সাজিয়েছি আমি। ছবিটা প্রতীকী।

    পৃথিবীতে কত মানুষ দেশ ছাড়া হন। আমরা দেশভাগের সময়ে তা দেখেছি। যুদ্ধ হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিজের দেশ, স্থান হারানোটা কখনও সুখের হয় না।’ ছবির শুটিং শুরু হওয়ার পরেই কোভিড শুরু হয়ে যায়। তাই বেশ কয়েক বছর শুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে বলে খুশি পরিচালক।

    এখন কি প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে ছবির সংখ্যা কমে গিয়েছে? জবাবে গৌতম বলছেন, ‘প্রান্তিক শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। কে প্রান্তিক, তার সিদ্ধান্ত নেবে কে? তবে আমি সব সময়ে সব শ্রেণীর মানুষের কথা বলতে ভালোবাসি। আমার ছেলেও (পরিচালক ইশান ঘোষ) কিন্তু সেই গল্প বলে। আসলে এখন কে কত খরচ করে বিয়ে করল সেই চর্চাটা বড় বেশি হয়। দেখনদারিটা বড্ড বেশি। যাঁরা আমাদের শহরের বেশিটা জুড়ে রয়েছেন, যাঁরা ছাড়া শহরটা অচল, তাঁদের কথাই বলা হয় খুব কম সংখ্যক ছবিতে।’

    এত বছর পর আবার বলিউডের অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করলেন। শাবানা আজ়মি বা নাসিরুদ্দিন শাহ, শত্রুঘ্ন সিনহার সঙ্গে চিত্রাঙ্গদা সিং–এর কোনও ফারাক পেলেন কি?

    পরিচালকের উত্তর, ‘আমি সবার সঙ্গে কাজ করেছি। ভালো অভিনতা, স্টার, খুব খারাপ অভিনেতা—কখনও সমস্যা হয়নি। আসলে পরিচালককে অভিনেতার সাইকিটা বুঝতে হয়। তাঁকে ভালোবাসতে হয়। ঝগড়া করে ভালো কাজ হয় না। প্রত্যেকটা মানুষ যেমন আলাদা, অভিনেতাও তাই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, প্রত্যেকে অসাধারণ অভিনেতা। চিত্রাঙ্গদা খুব ভালো অভিনেত্রী। ভীষণ সিরিয়াস। তবে বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করা খুব কঠিন। এই ছবির ভারতীয় বাচ্চাটিকে অনেক খুঁজে ইন্দোর থেকে জোগাড় করেছি। ইতালির বাচ্চাটিও দারুণ। ভারতীয় শিশু অভিনেতাকে আমি বলতাম গৌতম স্যর নয়, গৌতম বল আমাকে। সে িকছুতেই বলবে না। বললাম, তোর সঙ্গে তো আমি খেলব। শুটিং শেষ করে। এ ভাবেই আমি কাজ করি আমার অভিনেতাদের সঙ্গে। কখনও অসুবিধে হয়নি।’

    ফেরা যাক ‘কিফ’–এ। এই বছর ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিয়ান, বেঙ্গলি প্যানোরামা—প্রতিযোগিতার সব সেকশনই থাকছে। তবে ছবির সংখ্যা কিছুটা কমবে। গৌতমের কথায়, ‘একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মানে শুধুই ছবি দেখা নয়। তার সঙ্গে সেমিনার, সিম্পোজ়িয়াম, ইন্টার‍্যাকটিভ সেশন থাকা জরুরি। আমি ছবির সংখ্যা কমাতে বলেছিলাম, সবাই মেনে নিয়েছেন। ঘাড়ে–ঘাড়ে ছবি দেখার কোনও মানে হয় না।

    এই বছর ওয়ার্ল্ড সিনেমার ক্ষেত্রে যে ক’টা গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যাল হয়েছে, যতগুলো ছবি পুরস্কার পেয়েছে, প্রায় সব ক’টাই থাকবে। বিদেশি অনেক অতিথির সেশন থাকবে। ভারতের বিভিন্নপ্রান্ত থেকেও বক্তারা আসবেন। ভালো প্যাকেজ। আরও একটা প্রস্তাব আমি রাজ্য সরকারকে দিতে চাই, সারা বছর ফেস্টিভ্যালের জন্য একটা অফিস করা প্রয়োজন। শুধু ফেস্টিভ্যালের সময়ে কাজ করলে হবে না। রাউন্ড দ্য ইয়ার কাজ করতে হবে।’
  • Link to this news (এই সময়)