নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: জল সরবরাহ বন্ধ। কেউ কেনা জল খাচ্ছেন। আবার কেউ পুরসভার ট্যাঙ্কের জল নিচ্ছেন। ফুলবাড়ি প্লান্ট বন্ধের প্রথমদিন শুক্রবার এমন ছবি ধড়া পড়েছে শিলিগুড়িতে। আজ, শনিবারও সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তাতে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তবে পুরসভার দাবি, দ্রুত জল সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। এমন সঙ্কটকালে শহরের রাজনীতিতে ধরা পড়ল অদ্ভুত দৃশ্য। ময়দানে নেমে তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলাররা তো বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিয়েছেনই। এমনকী, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে নাগরিকদের পাশে দাঁড়ান সিপিএম ও বিজেপির কাউন্সিলাররা। তাঁরাও বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেন।
অন্যদিকে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শহরের বাজারে পানীয় জলের দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে জলের ২০ লিটার জারের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক অবধ সিঙ্গাল অবশ্য বলেন, জল নিয়ে এ ধরনের কোনও অভিযোগ মেলেনি। তবে জলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে নজর রাখা হয়েছে। মেয়র গৌতম দেব বলেন, জলের প্লান্ট বন্ধ থাকলেও এদিন তেমন সমস্যা হয়নি। নাগরিকদের কাছ থেকেও অভিযোগ মেলেনি।
পূর্ব ঘোষণা অনুসারে এদিন ফুলবাড়ি প্লান্টের সঙ্গে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিকল্প ইনটেক ওয়েলকে সংযুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছে পুরসভা। এজন্যই শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডে নলবাহী পানীয় জল সরবরাহ হয়নি। ফলে নাগরিকদের একাংশ খাবার জন্য বাজার থেকে জলের ১০ ও ২০ লিটারের জার খরিদ করেন। আবার কেউ কেউ পুরসভার ট্যাঙ্কের জল সংগ্রহ করেন। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভা আগাম ঘোষণা করায় বাড়ির ট্যাঙ্কে ও বিভিন্ন পাত্রে অতিরিক্ত জল মজুত করা হয়েছে। তা ফিল্টার করার পর ফুটিয়ে পান করা হচ্ছে। আর পুরসভার ট্যাঙ্কের জল দিয়ে বাড়ির কাজ করা হচ্ছে।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন পুরসভার শাসক ও বিরোধী দলের কাউন্সিলাররা। এদিন ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার গার্গী চট্টোপাধ্যায় টোটোয় করে বাড়ি বাড়ি জলের পাউচ পৌঁছে দিয়েছেন। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার স্বামীজি সরণিতে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি বাড়ি পাউচ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। গার্গী বলেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেখানো পথেই মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তাই বিপদের দিনে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিয়েছি।
একই ছবি শহরের সিপিএমের ২৯ এবং বিজেপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ধরা পড়েছে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শরদিন্দু চক্রবর্তী ট্যাঙ্ক ও ডিপ টিউবওয়েল থেকে জ্যারিকেনে জল ভড়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, এই সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। তাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন বলেন, পুরসভার সরবরাহ করা পাউচ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু, জলের চাহিদার তুলনায় জোগান কম। আজ, শনিবার সঙ্কট মারাত্মক আকার নিতে পারে বলেই তিনি মনে করেন।
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য দুলাল দত্ত অবশ্য জানান, আজ, সকালের মধ্যে প্লান্টের সঙ্গে ইনটেক ওয়েল সংযোগ করার কাজ শেষ করে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।