দুই 'লাল' মিলেও লাল হল না নৈহাটি, সবুজ ঝড়ে উড়ে গেল লিবারেশন
আজকাল | ২৩ নভেম্বর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উপনির্বাচনে নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল। শাসক দলের প্রার্থী সনৎ দে ৪৯ হাজার ১৯৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী রূপক দত্ত। প্রচারে ঝড় তুললেও বাম সমর্থিত সিপিআই (এমএল) লিবারেশন প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার উপনির্বাচনে দাগ কাটতে পারলেন না। বলার মতো ভোট পেলেন না কংগ্রেস প্রার্থী পরেশ সরকারও। ফল ঘোষণার পর সদ্য জয়ী হওয়া তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে বলেন, 'নৈহাটির মানুষ বিজেপি ও বামেদের অপপ্রচারে বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। মানুষ প্রকৃত সত্য কোনটা তা বুঝেছেন। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাংলার উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।'
স্বাধীনতার পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত ছিল। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই নৈহাটির রাজনৈতিক ব্যাটন বামেদের দখলেই ছিল। বাম সরকারের দাপুটে মন্ত্রী রঞ্জিত কুন্ডু নৈহাটি থেকে পরপর তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। বিধানসভা উপনির্বাচনে খাস তালুতে বামেরা এবার উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পায়নি। সেই আসনটি লিবারেশনকে ছেড়ে দেয়। প্রার্থী করা হয় দলের প্রবীণ নেতা দেবজ্যোতি মজুমদারকে। ২০১১ সালে পালাবদল হয়। পার্থ ভৌমিক পরপর তিনবার নৈহাটির বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪ সালে পার্থকে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে দল প্রার্থী করে। সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে তাঁকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে হয়েছে। পার্থর ছেড়ে আসা আসনে শাসক দল নৈহাটি পুরসভার দু'বারের কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান পারিষদ সনৎ দে-কে প্রার্থী করে।
সনৎ নৈহাটি টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদেও রয়েছেন। দক্ষ সংগঠক হিসেবে এলাকায় তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী করে রূপক দত্তকে। কংগ্রেসের প্রার্থী পরেশ সরকার। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লিবারেশন ও বিজেপি ব্যাপক প্রচার শুরু করে। বামেদের কয়েকজন হেবিওয়েট নেতা লিবারেশন প্রার্থীর হয়ে নৈহাটিতে প্রচার করেছেন। বিজেপিও ভোট প্রচারে বিস্তর ঘাম জড়িয়েছে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, বিরোধীদের ভোট প্রচারের কোনও টোটকাই কাজে লাগল না। তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে হেসেখেলে জয়লাভ করলেন। তিনি জয়ী হলেন ৪৮ হাজার ৮৭৯ ভোটে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রথমবার বাম জোটে যুক্ত হওয়ার পর লিবারেশন প্রার্থী দেবজ্যোতিকে নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও তাঁর অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গেল, অনেক কম ভোট পেয়ে তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। বরং লিবারেশনকে ছাপিয়ে বিজেপি প্রার্থী রূপক দত্ত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন।
ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক নৈহাটি কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শহরে ১৫ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিল। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নৈহাটি কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেছে। শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে ৪৮ হাজার ৮৭৯ ভোটে জয়লাভ করেছেন। নৈহাটি বঙ্কিমাঞ্জলি স্টেডিয়ামে ভোট কেন্দ্রের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের কল্যাণের জন্য অনেক জনমুখী প্রকল্প করেছেন। কিন্তু বিজেপি ও বামেরা একজোট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করেছে। বাংলার মানুষ সেই ষড়যন্ত্র ও কুৎসার জবাব দিয়েছেন। শুধু নৈহাটি নয়, রাজ্যের ছয় কেন্দ্রের উপনির্বাচনেই মানুষ তৃণমূলের পক্ষে রায় দিয়েছেন।'