• বহরমপুরে দুই ভৈরবের শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বহরমপুর শহরে দুই ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামল। রবিবার দুপুর থেকে নিম বাবা ও বড় ভৈরবের বিসর্জন ঘিরে ভাগীরথীর পাড়ে উৎসবের মেজাজ। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দুপুর বেলায় শহর পরিক্রমা শুরু করে। এই দুই পুজোর আয়োজন নিয়ে গত একসপ্তাহ ধরে মেতে ছিলেন খাগড়া ও সৈদাবাদের বাসিন্দারা। এই শোভাযাত্রা দেখতে শহরের গলিপথে ভিড় জমান লক্ষাধিক মানুষ। বাড়ির ছাদ থেকে বাতাসা ও ফুল ছুঁড়ে দেন সাধারণ মানুষ। বাড়ির ছাদ থেকে পড়তে থাকা সেই বাতসা, নকুলদানা ও কদমা থেকে বাঁচতে অনেকেই টুপি ও হেলমেট পরে শোভাযাত্রায় হাঁটলেন। ডিজে বক্স ও অধুনিক লাইটের আলোয় এক একটি দল একে অপরকে টেক্কা দিল। শোভাযাত্রায় যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই আগেভাগে কয়েক’শ পুলিসকে রাস্তায় নামানো হয়। শহরের অন্যতম ব্যস্ত খাগড়া এলাকায় এদিন দুপুর থেকেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়। 


    এদিন দুপুরে ভৈরব তলার মণ্ডপ থেকে বিশালাকার বড় ভৈরবের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা শুরু হয়। তারপর পুরানো হাসপাতাল মোড় হয়ে কল্পনা হাউজের মোড়ে পৌঁছয় শোভাযাত্রা। এরপর বান্ধব প্রেসের মোড় হয়ে খাগড়া চৌরাস্তার মোড় অবধি যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভৈরবতলা মন্দিরের কাছে এনে ভাগীরথীর ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। অপরদিকে সৈদাবাদের নিমতলা থেকে নিম বাবার বিশাল মূর্তি শোভাযাত্রার জন্য বের করা হয় বিকেলে। কুঞ্জঘাটা হয়ে, নেতাজি মোড় ঘুরে বান্ধব প্রেসের মোড়ে আসে। তারপর কল্পনা হাউজের মোড় হয়ে ফের বান্ধব প্রেস হয়ে নেতাজি মোড় থেকে সোনাপট্টি হয়ে সৈদাবাদ রাজবাড়ির ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। এই কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ পথের পাশে দোকানপাট থাকলেও এদিন বাড়তি স্টল দেন ব্যবসায়ীরা। ভৈরব তলা ঘাটের পাশে মাঠের রীতিমতো মেলা বসে যায়। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার সাক্ষী হতে শহরে আসেন। 


    লালবাগের বাসিন্দা সাগ্নিক ঘোষ বলেন, প্রতিবছর এই জমকালো শোভাযাত্রা দেখার জন্য বহরমপুরে আসি। একইসঙ্গে দুই ভৈরবের বিসর্জন দেখতে পাওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। গতবারও খাগড়ার এই নেতাজি মোড়ের কাছে আমি হেলমেট মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এত মানুষ দোতলার উপর থেকে বাতাসা ও কদমা ছোড়েন, যে মাথায় এসে আঘাত লাগে। এবারও তাই করতে হয়েছে। 


    ভৈরবতলা ঘাটের কাছে কলাইয়ের ডালের জিলাপি ভাজছিলেন গৌরাঙ্গ মণ্ডল নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ভৈরব পুজো উপলক্ষ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। এই বিসর্জনের দিনটাতে প্রতিবছর দোকান দিই। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ আসে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার পর অনেকেই মিষ্টিমুখ করেন। তাই আমাদের ভালো বিক্রি হয়েছে। কল্পনা হাউজের মোড়ের এক বাসিন্দা নীলিমা দাস বলেন, আমাদের চারতলার ফ্ল্যাট থেকেই এই শোভাযাত্রা ভালোভাবে দেখা যায়। কান্দি থেকে এক আত্মীয় এটা দেখার জন্য গতকালই আমাদের বাড়ি চলে এসেছেন। বারান্দায় বসে শোভাযাত্রা উপভোগ করছি। যারা শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে তাদেরকে বাতাসাও ছুড়ে দিয়েছি।
  • Link to this news (বর্তমান)