• ভোটে হারতেই ক্ষোভে ফুঁসছে বিজেপির একাংশ, ‘দিলীপ ঘোষকেই চাই’  পোস্ট ঘিরে শোরগোল
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: একে তো উপনির্বাচনে হারের জ্বালা। তার উপর কর্মী সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলীপ ঘোষকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে পোস্ট করতে থাকায় চরম অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে হারের পর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফের দিলীপ ঘোষকেই চাই’ বলে সোচ্চার হচ্ছেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকরা। বিজেপি নেতাদের কথায়, জেলায় দিন দিন কোণঠাসা করা হচ্ছে প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষকে। উপনির্বাচনে তাঁকে সেভাবে কাজেই লাগানো হল না। যারফলে উপনির্বাচনে দিলীপ ঘনিষ্ঠরা ময়দানে নামেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে। এ নিয়ে তৃণমূলের কটাক্ষ, মানুষের জন্য কাজ করতে হয় না। তাই গোষ্ঠীকোন্দলই বিজেপির ভরসা। এদিকে উপনির্বাচনে হারের পর দলীয় স্তরে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।


    তবে এদিন দিলীপবাবু বলেন, আসলে টিএমসি ভোট করতেই দেয় না। ফলে জেতাহারা মানুষের উপর নির্ভর করে না। আমাকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব আমার ইচ্ছেমতো হবে, এটা হয় না পার্টিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ তাঁদের অভিমত জানাতেই পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্যই তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের পর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাজুড়ে বিজেপির সংগঠন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি কার্যত জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগঠন মজবুত করেছিলেন। তার ফলস্বরূপ ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করে বিজেপি। তবে বিজেপি নেতৃত্বের ক্ষোভ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের সিদ্ধান্তে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন কিছু নেতা। আর সেই সময় থেকেই চরম আকারে শুরু হয় গোষ্ঠী কোন্দল। যা একেবারেই ভালো চোখে দেখেননি দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠরা। এর প্রভাব পড়েছে প্রতিটি নির্বাচনে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ও গত লোকসভা ভোটেও জিততে পারেনি গেরুয়া শিবির। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নেতৃত্ব জানাচ্ছে, দিনে দিনে জেলায় দিলীপ ঘনিষ্ঠদের পদ থেকে সরানো হয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা ক্ষমতাসীন নেতাদের হাতেই দলের কন্ট্রোল চলে গিয়েছে। তাই এবারের উপনির্বাচনেও প্রচারে সেভাবে দেখা মেলেনি দিলীপবাবুর। দিলীপ ঘনিষ্ঠ  মহিলা সংগঠনের একাংশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। দিলীপ বিরোধীরা টাকা খরচ করেই ভোটে বাজিমাত করতে চেয়েছেন। 


    জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, রাজ্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিজেপিকে চিনিয়েছেন দিলীপ ঘোষই। এছাড়া জেলার জঙ্গলমহলে সংগঠন বৃদ্ধিতে তাঁর বড় অবদান ছিল। কিন্তু তৃণমূল থেকে আসা নেতারাই দলের সমস্ত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উপনির্বাচনে দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হলে ভোট আরও বাড়ত। উচ্চ নেতৃত্বের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দিন দিন ফল খারাপ হচ্ছে। 


    এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, গোষ্ঠীকোন্দল থেকেই বিজেপির পরিচয়। কেন্দ্রে এত বছর ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের জন্য কিছুই করেনি বিজেপি। উপনির্বাচনের ফলাফলেও সেটা স্পষ্ট। বিজেপির প্রথম সারির নেতারা উপনির্বাচনে দাঁড়ালেও হেরে যেতেন। আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জনসংযোগ ও সংগঠন, যা বিজেপির নেই।


    বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায় বলেন, দিলীপদা আমাদের পাশে থেকেছেন। উনি উপনির্বাচনে দাঁড়াতে চাননি। তবে আমরা প্রায় ৮১ হাজারের বেশি মানুষের সমর্থন পেয়েছি। আমাদের লড়াই জারি থাকবে। আপাতত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলছে। আশা করছি আরও ভালো ফলাফল হবে।


    (খড়্গপুরের খরিদা বাজারে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে দিলীপ ঘোষ।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)