আঞ্চলিক দলই শক্তি ইন্ডিয়ার, নির্বাচনের ফলে প্রত্যয়ী মমতা
বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২১ সালের বিধানসভা, ২০২২’এর পুরসভা, ২০২৩’এর পঞ্চায়েত, ২০২৪ সালের লোকসভা—গত কয়েক বছর ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে তৃণমূলের ট্র্যাক রেকর্ড নিয়ে এখনও কি ঈর্ষা করার মতো অবস্থায় পৌঁছয়নি তথাকথিত জাতীয় দলগুলি? সর্বশেষ উপ নির্বাচনের ফলে কিন্তু এই প্রশ্নই আরও একবার তুলে দিল তৃণমূল। পরিসংখ্যান বলছে, এই একটি ভোটেও বিজেপি বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারেনি। একের পর এক ইস্যু তোলা হয়েছে, নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তারপরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই ভরসা রেখেছে বাংলার মানুষ। এবারের উপ নির্বাচন আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছে, বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে কোমর বাঁধতে পারে আঞ্চলিক দলগুলির আন্তরিকতাই। আর এই প্রত্যয় আজ, সোমবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে ভাগ করে নিতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পরিষ্কার করে দিতে চান, মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র শক্তি আঞ্চলিক দলই। আসন্ন যাবতীয় নির্বাচনী আবহে তৃণমূল সহ প্রত্যেক আঞ্চলিক দলকে সামনের সারিতে নিয়ে আসার বার্তাই জাতীয় মঞ্চে পৌঁছে দিতে চলেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিনও তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলা কিংবা ঝাড়খণ্ড—সর্বত্র আঞ্চলিক দলের কাছেই পরাজিত হচ্ছে বিজেপি। সর্বভারতীয় কোনও দল কিন্তু লাগাতার এভাবে বিজেপিকে হারাতে পারছে না।’
ছয় আসনের বিধানসভা উপ নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। রাজ্যের শাসক দলের অন্দরের খবর, আর জি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলনে তৃণমূলের মধ্যেও যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। জনতা পাশে আছে—এটাই তৃণমূলের ইউএসপি। আর এই প্রেক্ষাপটেই তড়িঘড়ি তৃণমূল সুপ্রিমোর ডাকা বৈঠক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে রাজনীতির কারবারিদের কাছে। ছয় আসনে ফল ঘোষণার দু’দিনের মধ্যে এই বৈঠক। তাই আজ সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়া সত্ত্বেও লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বৈঠকে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদের অধিবেশনে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কোন কোন বিষয়ে তৃণমূল সরব হবে, সেই নির্দেশও দেবেন নেত্রী। একটা বিষয় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও সংশয় রাখছেন না—তৃণমূল ইন্ডিয়ায় ছিল, থাকবেও। কিন্তু আঞ্চলিক দল হিসেবে যাতে তাঁদের পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া না হয়, সেটাই বোঝাতে চাইছেন তিনি। এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে লাগাতার কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নামানো হয়েছে। সঙ্গে বাংলাকে আর্থিক বঞ্চনা। তারপরও ভোটযন্ত্রে বিজেপির জন্য ইতিবাচক কিছু নেই। তাই আঞ্চলিক দলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং শক্তিশালী করা দরকার।’ আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘জমিদার এবং অন্য একটি অংশ তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাংলাকে বদনাম করার ফল পেয়েছে ভোটবাক্সে।’ তবে জাতীয় প্রেক্ষাপট ছাড়াও রাজ্যের প্রসঙ্গ আজ কালীঘাটের বৈঠকে উঠে আসা নিয়ে প্রবল গুঞ্জন। তৃণমূলের অভ্যন্তরে রদবদলের যে প্রস্তুতি চলছে, তা উঠে আসে কি না, সেদিকেই নজর সকলের।