মঙ্গল থেকে শুক্র দুয়ারে রেশন, সব আপত্তি উড়িয়ে ডিলারদের কড়া নির্দেশ নবান্নের
বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২১ সালের নভেম্বরে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চালুর বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, দোকান থেকে নয়, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার এলাকায় গিয়ে রেশনের খাদ্যসামগ্রী গ্রাহকদের পৌঁছে দিতে হবে। সেই প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পাদন হবে, এতদিন তা অনেকটাই নির্ভর করত ডিলারদের উপর। সেই সুযোগে অনেক ডিলার ই-পস মেশিন ‘নর্মাল মোড’-এ রেখে দোকান থেকেই রেশন দিয়ে দিতেন। ফলে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অধরা থাকছিল। রেশন ডিলারদের একাংশের এই অসহযোগিতা এবার কড়া হাতে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য খাদ্যদপ্তর। ডিসেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল থেকে শুক্রবার দোকানের বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিবর্তনও করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সপ্তাহের এই চারদিন ডিলাররা ই-পস যন্ত্রের ‘নর্মাল মোড’ ব্যবহার করে রেশন দিতে পারবেন না। ওই দিনগুলির জন্য ‘দুয়ারে রেশন মোড’ ব্যবহার করতে হবে। পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এনিয়ে ডিলারদের আর কোনও ওজর-আপত্তি মানবে না সরকার।
রেশন বণ্টন ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি অনলাইনে সম্পন্ন হয়। কোন কোন ডিলার ‘দুয়ারে রেশন’ করছেন না, তথ্যপ্রযুক্তির সৌজন্যে তা জেনে নিতে পারে খাদ্যদপ্তর। ‘দুয়ারে রেশন’ পরিষেবা দিলে ডিলাররা প্রতি কুইন্টাল খাদ্যসামগ্রী পিছু ৯৫ টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত ৭৫ টাকা করে কমিশন পান। মাসে আরও ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। যেসব ডিলার ‘দুয়ারে রেশন’ করতেন না বা কম করতেন, তাঁরা সেই অনুযায়ী কমিশন পেতেন। এই পরিষেবা কম দিলে ডিলারদের শো-কজও করা হতো। তা সত্ত্বেও ডিলারদের একটা বড় অংশ ‘দুয়ারে রেশন’-এ আগ্রহ দেখায়নি। তাই এবার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁদের বাধ্য করতে উদ্যোগী হয়েছে দপ্তর। নয়া ব্যবস্থায় শুধু শনিবার দু’বেলা ও রবিবার সকালে ডিলাররা ই-পস মেশিন ‘নর্মাল মোডে’ রেখে রেশন দিতে পারবেন। দোকান থেকে বেরিয়ে কোন জায়গায় গিয়ে ডিলার রেশন দিচ্ছেন, জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তাতে নজর রাখে দপ্তর। দোকান থেকে অন্তত ৫০ মিটারের বেশি দূরে গিয়ে রেশন দেওয়টাই নিয়ম। ফলে ই-পস মেশিন ‘দুয়ারে রেশন মোড’-এ রেখে দোকান থেকে খাদ্য দেওয়া আর সম্ভব হবে না।
এই পরিবর্তনে যথারীতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেশন ডিলারদের সংগঠন। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা শীঘ্রই আন্দোলনে নামবেন। তাঁদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় গ্রাহকরাই অসুবিধায় পড়বেন। প্রতিকূল আবহাওয়া ও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সমস্যা হবে। অন্য রাজের কার্ডে যাঁরা এখান থেকে রেশন নেন, বিপাকে পড়বেন তাঁরাও। খাদ্যদপ্তর অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, এসব অসুবিধা দূর করার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।