কিছুদিন আগে ‘দানা’র প্রভাবে ধান চাষে ক্ষতি হয়েছিল। দুঃসময় কাটিয়ে ফের ধান লাগিয়ে সুখের দিনের অপেক্ষায় ছিলেন সকলে। ধান পাকার সময় এগিয়ে এসেছে, আর সেই সঙ্গে কাঁচা–পাকা ধানে মই দিতে হাজির হাতির পাল। ফসল বাঁচানোর চেষ্টায় সম্পূর্ণ না পাকা ধানও কেটে নিচ্ছেন কলাইকুণ্ডা, রোহিণী, দুধকুণ্ডি, সাঁকরাইলের চাষিরা।
ঝাড়গ্রাম জেলায় এই মুহূর্তে ১৫০টি বুনো হাতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যার মধ্যে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগে ১৩টি হাতি এবং খড়্গপুর বনবিভাগে ১৩৭টি হাতি রয়েছে। দিনের বেলা হাতির দল জঙ্গলে থাকলেও সন্ধ্যা হলেই খাবারের সন্ধানে জঙ্গল ছেড়ে তারা নেমে পড়ছে ধানজমিতে। শুধু যে ধান খাচ্ছে তা নয়, আসা-যাওয়ার পথে হাতির পায়ের তলায় পড়েও প্রচুর ধানগাছ নষ্ট হচ্ছে।
যার ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। সাঁকরাইল ব্লকের দুধকুণ্ডি এলাকার চাষি প্রতাপ মাহাতো বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। যে পরিমাণে হাতির দল ঢুকে পড়েছে, তাতে রোহিণী এলাকার অনেক জমির ক্ষতি হয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ধান কাটার চেষ্টা করছি। ফসল এখন বাড়ি তুলে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচি!’
আরও এক চাষি ফুলকুমার মাহাতো বলেন, ‘ঋণ নিয়ে কষ্ট করে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। অনেক জায়গায় ধান পেকেছে আবার অনেক জমিতে ধান পাকেনি। আরও এক সপ্তাহ থাকলে সম্পূর্ণ ধান পেকে যেত। কিন্তু রাত হলেই খাবারের সন্ধানে বুনো হাতির দল ধানজমিতে হানা দিচ্ছে। বড় হাতির দল যদি জমিতে নামে, তা হলে এক রাতেই সমস্ত জমি ফাঁকা করে দেবে। ফসল বাঁচাতে পাকার সঙ্গে সবুজ কাঁচা ধানও কেটে নিচ্ছি।’
হাতির দলকে সামাল দিতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে বন দপ্তরকে। চাষিরা যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তা স্বীকার করছেন বনকর্তারা। খড়গপুরের ডিএফও মনীশকুমার যাদব বলেন, ‘খড়্গপুর ডিভিশনের কলাইকুণ্ডা ও সাঁকরাইল মিলে ৫৫টি এবং নয়াগ্রামে ৮২টি হাতি রয়েছে। নয়াগ্রামের দিকে আমরা অনেক দিন ধরেই পাকা ধান কেটে নেওয়ার জন্য মাইকে প্রচার চালিয়েছি। নয়াগ্রাম আমন ধান কাটা হলেও সেখানে যে বাদশাভোগ ধান চাষ হয়, তা এখনও তেমন ভাবে পাকেনি। যার ফলে ওই ধান এখনও জমিতে রয়ে গিয়েছে। কলাইকুণ্ডার দিকে এখনও তেমন ধান কাটা হয়নি। অনেক হাতি এক জায়গায় থাকলে, সেখানে তো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। হাতি যাতে জমিতে না নামে, সে জন্য যতটা সম্ভব, চেষ্টা করছি।’