• কেন্দ্রের ওয়াকফ বিলের আঁচ বাংলার বিধানসভায়, সংঘাতের জন্য তৈরি হচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই
    আনন্দবাজার | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • সংসদে পেশ করা ওয়াকফ সংশোধনী বিল (২০২৪) নিয়ে এ বার সরগরম থাকতে পারে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। বাংলার বিধানসভায় তার ইঙ্গিত মিলেছে সোমবার অধিবেশন শুরুর দিনেই। ওই সংশোধনী বিলের প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিধানসভায় এই সংক্রান্ত একটি বিল পেশ এবং পাশ করাবে তাঁর সরকার। তবে সেটি বিল না কি প্রস্তাব আকারে আনা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যে আকারেই আনা হোক না কেন, বিজেপি তার বিরোধিতা করবে বলে জানা গিয়েছে।

    সোমবার বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়া নদিয়ার পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে এই প্রথম বিধানসভার অধিবেশনে ছিলেন। তবে প্রথম দিনের সভা সেই অর্থে নিরুত্তাপই ছিল। তবে আগামী দিনে উত্তাপ যে বাড়তে পারে তার ইঙ্গিত মিলেছে। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে আর তাল মিলিয়ে চলবে না তারা। গত বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে শাসকদলের বিধায়ক যখন রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গেয়েছিলেন, তখন উঠে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। এ বার বিজেপি সেই সৌজন্য যে দেখাবে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে। বরং ওয়াকফ সংশোধনী বিল, নতুন ছয় বিধায়কের শপথগ্রহণের মতো বিষয়ে মমতার সরকারের বিরোধিতার পথে হাঁটবে তারা। বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ‍্যসচেতক শঙ্কর ঘোষ সোমবার বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে স্থির হয়েছে, বিধানসভার এই অধিবেশনে নতুন বিধায়কদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হলে সেখানে বিজেপি বিধায়কেরা থাকবেন না।

    অন্য দিকে, সোমবার শাসকদলের বিধায়কেরা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের ঘরে গিয়ে অধিবেশন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। শীতকালীন অধিবেশনে কী কী বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হবে, আলোচনা হবে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। মোদীর সরকার যে ওয়াকফ সংশোধনী বিল (২০২৪) এনেছে, তার প্রতিবাদে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলকে সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা। আগামী ৩০ নভেম্বর রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম‍্যান তথা ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন।

    রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সমাবেশে উপস্থিত থাকতে পারেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, লোকসভায় তৃণমূলের মুখ‍্যসচেতক কল‍্যাণ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়েরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমাবেশে ওয়াকফ বিল নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করবেন কল্যাণ। কেন্দ্রের আনা ওয়াকফ সংশোধনী বিল এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে রয়েছে। ওই কমিটিরই সদস্য কল্যাণ। ৩০ নভেম্বরের সমাবেশ প্রসঙ্গে মোশারফ বলেন, ‘‘ওয়াকফের সম্পত্তি পূর্বপুরুষ দান করে গিয়েছেন। ঘুরপথে, চক্রান্ত করে অগণতান্ত্রিক ভাবে আইন এনে বিজেপি তা দখল করতে চাইছে। এই চক্রান্ত সফল হবে না। প্রতিবাদে রাজপথে সংগ্রাম চলবে।’’

    জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সোমবার প্রথম বিধানসভার অধিবেশনে এসেছিলেন পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ২৩ মাস পরে গত সেপ্টেম্বরে তিনি জামিন পান। তার পরে বিধানসভায় এসেছিলেন তিনি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে দীর্ঘ ক্ষণ কথাও বলেন। তবে জেলমুক্তির পরে সোমবারই প্রথম অধিবেশনে যোগ দিলেন তিনি।

    পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী সোমবার বিধানসভায় জানিয়েছেন, কলকাতায় বহু গাড়ির ‘রোড ট্যাক্স’ বকেয়া রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু দামি গাড়িও। ওই বকেয়া ‘রোড ট্যাক্স’ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য গাড়ির মালিকদের এসএমএস করে পরিবহণ দফতর আবেদন জানাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কলকাতাতেই দামি গাড়ির জরিমানা-সহ ৮০ কোটি টাকা ‘রোড ট্যাক্স’ বকেয়া রয়েছে। মন্ত্রীর মতে, গাড়ি কেনার পরে অনেক সময়েই মালিকদের কর দেওয়ার কথা মনে থাকছে না। এই কর আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে পরিবহণ দফতর। যে সব গাড়ির জন্য কর দেওয়া হয়নি, তাদের রাস্তায় ধরার জন্য ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’ রাখা হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, রোড ট্যাক্স নিয়মিত দেওয়া হলে সরকারের রাজস্ব বাড়ে। রাজস্বের সেই টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে। এতে আখেরে নাগরিকদেরই সুবিধা হবে বলে বিধানসভায় মন্তব্য করেছেন তিনি।

    বিধানসভা উপনির্বাচনে রাজ্যের ছয় আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। নৈহাটি, হাড়োয়া, সিতাই, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা এবং মাদারিহাটের নতুন নির্বাচিত বিধায়কেরা শপথগ্রহণ করবেন। বিধানসভার অধিবেশনে সেই শপথগ্রহণ হলে সেখানে থাকবেন না বিজেপি বিধায়কেরা, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিধায়কদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ‍্যসচেতক শঙ্কর। প্রসঙ্গত, এর আগে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেয়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ নিয়ে টানাপড়েন চলেছিল বিধানসভার স্পিকার এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মধ্যে। এ বারও কি তাই হবে? শনিবার উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। মঙ্গলবার সংবিধান দিবস। বিধানসভার সব সদস‍্যকে সংবিধান দিবসের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন স্পিকার।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)