'কাউকে কিছু বোলো না মা, ভালো থেকো', অভিনব কায়দায় ডাকাতি করে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা
আজকাল | ২৫ নভেম্বর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাউকে কিছু বোলো না মা। তোমরা সবাই ভালো থেকো। সর্বস্ব লুট করে চলে যাওয়ার সময় বাড়ির মহিলাদের উদ্দেশে ডাকাত দল এমনই কথা বলে গেল। ভয়ে কাঁপতে থাকা এক মহিলার হাতে তারা জলের বোতলও তুলে দিল। শনিবার রাতে অভিনব ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়। পুলিশকর্তারাও ডাকাত দলের বিনয়ী ব্যবহারের কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে বারাসত জেলা পুলিশ বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে দেগঙ্গার আমুলিয়া পঞ্চায়েতের কলাপোল এলাকায় মৃণাল চৌধুরী ও তরুণতপন দেবের বাড়িতে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দু'টি মোটর বাইকে করে দুষ্কৃতী দল ওই এলাকায় এসেছিল। বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তারা মহিলাদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র নিশানা করে। তারপর তাদের ঘরের মেঝেতে মাথা নিচু করে বসে থাকতে বলে। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বোমা। নড়াচড়া করলেই ফেটে যাওয়ার ভয়ে পুরুষরা দুষ্কৃতীদের ধরিয়ে দেওয়া বোমা হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর ওই দুষ্কৃতী দল 'অপারেশন' শুরু করে। দুই বাড়ির আলমারি থেকে প্রায় ৩০ ভরি সোনা ও রুপোর গয়না দুষ্কৃতীরা ব্যাগে ভরে। কয়েক হাজার নগদ টাকাও তারা নিয়েছে।
দুষ্কৃতী দলের আগ্নেয়াস্ত্র দেখে চৌধুরী বাড়ির এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুষ্কৃতীয়া তাঁকে 'মা' বলে সম্বোধন করে। তারা জিজ্ঞাসা করে, 'কী হয়েছে মা তোমার? জল খাবে?' এক দুষ্কৃতী ওই মহিলার হাতে জলের বোতল ধরিয়ে দেয়। দুই বাড়ির সোনাদানা, টাকা-পয়সা লুট করে চলে যাওয়ার সময় ওই দুষ্কৃতীরা বলে যায়, 'কাউকে কিছু বোলো না মা। তোমরা সবাই ভালো থেকো।'
চৌধুরী পরিবারের সদস্যা অপর্ণা চৌধুরী বলেন, বাড়িতে ঢুকেই দুষ্কৃতীরা সবাইকে গান পয়েন্টে রাখে। তারা বাংলা ও হিন্দি মিশিয়ে কথা বলছিল। অসুস্থ হয়ে পড়লে মা সম্বোধন করে জলও দিয়েছে। অদ্ভূত ঘটনায় ভয় পাওয়ার পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের বিনয়ী কথাবার্তায় তারা অবাক হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। দেব পরিবারের গৃহকর্তা তরুণতপন বলেন, ডাকাতদের প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে লুঠপাট করে। এমনকী বাড়ির পুরুষদের হাতে বোমা ধরিয়ে দিয়েছিল। তবে মহিলাদের সঙ্গে তারা কোনও খারাপ ব্যবহার করেনি।
অভিনব কায়দায় ডাকাতের ঘটনায় পুলিশকর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বারাসত জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়েছে। সিটের মাথায় ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কয়েকজন আধিকারিক রয়েছেন। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে পার্শ্ববর্তী বাদুড়িয়াতেও একই রকম কায়দায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সিটের তদন্তকারী আধিকারিকরা মনে করছেন, বাদুড়িয়া ও দেগঙ্গার দুই ডাকাতির ঘটনাতে বেশ কিছু মিল রয়েছে। সম্ভবত দুই ঘটনায় একই দুষ্কৃতী দল কাজ করেছে। পুলিশ আপাতত বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ওই দুষ্কৃতী দলকে জালে ফেলার চেষ্টা করছে।