বিহারে গিয়ে বাস দুর্ঘটনায় দম্পতি সহ তিনজনের মৃত্যু
বর্তমান | ২৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, হলদিয়া: বিহারে কাজের সন্ধানে গিয়ে বাস দুর্ঘটনায় এক দম্পতি সহ তিনজনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে হলদিয়ায়। ঘটনার চারদিন পর রবিবার মৃতদের দেহ এসে পৌঁছতেই কান্নার রোল ওঠে। শেষকৃত্যের পর সোমবার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম হয়েছে দুই পরিবারে। কলকাতা থেকে বিহারের পাটনাগামী একটি বাস গত বৃহস্পতিবার সকালে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে তিনজন হলদিয়ার। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম বৃহস্পতি মান্না(৩১), দেবশ্রী মান্না দাস(২৪) এবং মানসী দেবনাথ(৩১)। বৃহস্পতি ও দেবশ্রী স্বামী স্ত্রী। ওই দম্পতির বাড়ি সুতাহাটা থানার কুঁকড়াহাটির হরিণভাষা গ্রামে। মানসীর বাড়ি হলদিয়া থানার ক্ষুদিরামনগরে। ওই দম্পতি ও মানসীদেবী পরস্পরের আত্মীয়। বৃহস্পতির হরিণভাষা মোড়ে একটি সেলুন দোকান রয়েছে। ওই কাজের পাশাপাশি চাষবাস ও নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু অনিয়নিত আয়ে ঠিকমতো সংসার চলত না। ওই যুবকের স্ত্রী দেবশ্রী তাঁর মাসতুতো বোন মানসীর সঙ্গে হারবাল প্রোডাক্ট বিক্রি করতেন। জানা গিয়েছে, ওই মাসতুতো বোনের সূত্রে পাটনায় কোনও সংস্থায় প্যাকিংয়ের কাজের সুযোগ আসে। ওই কাজে মাস ফুরোলে ভালো বেতন মিলবে এই আশায় গত বুধবার তিনজনই পাটনার উদ্দেশে রওনা দেন। ২০-২২দিন পর বাড়ি ফিরবেন জানিয়ে যান বাড়িতে। ওই দম্পতির একটি সাত বছরের ছেলে এবং মানসীর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই বাড়িতেই ছিল। বুধবার সন্ধে নাগাদ কলকাতার বাবুঘাট থেকে পাটনাগামী বাস ছাড়ে। পরদিন সকাল ৬ টা ১৫ মিনিট নাগাদ হাজারিবাগ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে গোড়হার থানা এলাকায় যাত্রী বোঝাই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ওই এলাকায় সিক্স লেনের কাজ চলছে। সেখানে লেন পরিবর্তনের সময় প্রায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে থাকা বাসটি উল্টে যায়। সাতজনের মৃত্যু হয় এবং আরও ২০-২৫ জন জখম হন। তিনজন মৃতের পাশাপাশি হলদিয়ার চারজন জখম ছিলেন। হলদিয়ার মৃতদের পরিবারের কাছে শনিবার খবর এসে পৌঁছয়। হলদিয়া থানার মাধ্যমে খবর আসে। ওইদিন রাতে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করার পরই রবিবার দেহ এসে পৌঁছয় হলদিয়ায়। ছেলে ও বউমার আকস্মিক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা বাবলু মান্না ও মা সুজাতা মান্না। সোমবার সকালে নাতি রাজদীপকে নিয়ে ছেলে বউমার পারলৌকিক কাজে ব্যস্ত। মাটির ছিটেবেড়া বাড়ির সামনে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা এসে উপস্থিত। চারদিকে শোকস্তব্ধ পরিবেশ। মা ও বাবা ফটোতে নাতি যখন ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছিল তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবলু ও সুজাতা। পারলৌকিক ক্রিয়া তদারকি করছিলেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মামনি দোলই। তিনি বলেন, ওদের পরিবারের পাশে রয়েছি। অনাথ ছেলেটির পড়াশোনার জন্য সহৃদয় মানুষের কাছে আবেদন জানাই। মানসী দেবনাথের শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলার শ্রাবন্তী শাসমল। তিনি বলেন, মানসীর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য কেউ এগিয়ে আসুক। ওদের বাবা ও মা কেউই নেই। শোকার্ত পরিবার।-নিজস্ব চিত্র