রাস্তার দাবিতে জনস্বার্থ মামলা মদত কোন নেতার? খোঁজ শুরু
বর্তমান | ২৬ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সরকারি প্রকল্পের জমিতেই চাই রাস্তা। সেই দাবিতে আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রকল্পের কাজও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে তারা প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিল। এবার রাস্তার দাবিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করল পুরুলিয়া-২ ব্লকের পলাশকলার এক বাসিন্দা। যদিও এর পিছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, গণশিক্ষা সম্প্রসারণ দপ্তরের উদ্যোগে পুরুলিয়া-২ ব্লকের পিঁড়রা গ্রামপঞ্চায়েতের গোপালপুর মৌজায় প্রায় ১০একর জমিতে দুঃস্থ, অনাথ শিশুদের জন্য সরকারি হোম তৈরি হবে বলে স্থির হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও জমির সীমানায় প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হতেই গণ্ডগোল বাধে। এনিয়ে প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। নেতাদের দাবি, মূলত একদিকের প্রাচীর তৈরি নিয়ে যত সমস্যা। ১৫ফুট ছেড়ে প্রাচীর হলে সেই সমস্যা থাকবে না। কেন? নেতাদের দাবি, এতদিন ওই এলাকা প্রাচীর ঘেরা না থাকায় আশেপাশের বলরামপুর, পলাশকলা, চাকিরবন, ডাবর, শিমু্লট্যাঁড়, পালঞ্জা সহ একাধিক গ্রামের মানুষজন মাঠের মাঝখানের মেঠোপথ ধরে যাতায়াত করতেন। প্রাচীর তৈরি হলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদেরই একাংশের পাল্টা দাবি, রাস্তার দাবি গৌণ। আসলে বিষয়টিতে কিছু নেতার স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। রয়েছে টাকার গন্ধ। তাই রাস্তা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, পুরুলিয়ার এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ীর এলাকায় প্রায় ৪২ বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমিতে যাওয়ার রাস্তা বের করে দেওয়ার জন্যই অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে তৃণমূল নেতাদের একাংশ।
রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়ার আবেদন জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি লিখেছিলেন জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও প্রশাসন তাতে কর্ণপাত না করায় গত ১১ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে জেলা পরিষদের শিক্ষা স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডাকা হয়। তবে গণশিক্ষা সম্প্রসারণ দপ্তরের কোনও আধিকারিক না থাকার জন্য মিটিং অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পরের দিন কিছু মহিলাকে দিয়ে গোপালপুরে পথ অবরোধও করানো হয়। নেতৃত্ব দেন অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি কাজল পাল, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ রাজপতি মাহাতরা। যদিও তাতেও বিশেষ ‘সুবিধা’ হয়নি।
এরপরই গত ২২ নভেম্বর এনিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন পলাশকলার বাসিন্দা বিজয় মাহাত। সেই কপি পৌঁছেছে জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের কাছেও। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, এনিয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলব না।
বিজয়বাবু বলেন, ‘আমার বাবা একবার একটা সেতুর জন্য জমি দান করেছিল। তাই আমিও চাই রাস্তা হোক। তার জন্য প্রয়োজনে আমিও জমি দান করব।’ মামলার আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে স্থানীয় ১০হাজার বাসিন্দার স্বার্থ জড়িয়ে আছে। আগামী বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি রয়েছে।’ তবে, বিষয়টিকে ভালো চোখে নিচ্ছে না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কোন কোন নেতা এর পিছনে এখনও মদত দিচ্ছে, সেব্যাপারে খোঁজখবরও শুরু হয়েছে। এনিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া অবশ্য বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে মীমাংসার মাধ্যমেই এর সমাধান করা উচিত।’