• বিশ্বযুদ্ধে বিমান উড়েছিল, ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসে এবার আলোচনার কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ‘রেড রোড’
    বর্তমান | ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ১৯১০ সালের জানুয়ারিতে রেড রোড থেকে উড়ল প্রথম প্লেন। ব্রিটিশরা ঠিক করলেন, যুদ্ধবিমান অবতরণ ও ওড়ানোর জন্য শহরে একটি অস্থায়ী রানওয়ে তৈরি করতে হবে। তারপর  রেস কোর্সের কাছে অ্যালেনবার্গ গ্রাউন্ড সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হল সেটি। প্রথম দিকে রাস্তার নাম ছিল ‘সেক্রেটারিজ ওয়াক’। বিকেলে দিকে শ্বেতাঙ্গ তরুণীরা এখানে হাঁটতে বেরতেন। লোকে বলা শুরু করল ‘লেডিজ মাইল’। লাল ইটের কুচিতে ভরা সে রাস্তা ক্রমে লোকমুখে হয়ে গেল ‘রেড রোড’। ঐতিহাসিক সেই রেড রোডের উপর ফের পড়ল আলো। জাতীয়স্তরে চর্চার বিষয় হয়ে উঠল কলকাতার গর্বের এই পথ।


    দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের থেকেও কম। চওড়া ১৮ মিটার। কিন্তু কল্লোলিনী কলকাতার অবিচ্ছেদ্য অংশ স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই রেড রোড আজ সারা দেশের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এমনকি ছত্তিশগড়ের রায়পুরে সদ্য অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি। জাতীয় স্তরে এই রাস্তা নিয়ে আলোচনার কারণ কী? কারণ পথটি একেবারে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে সংস্কার করা হয়েছে। রাজ্যের এই উদ্যোগের ফলে একদিকে দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। একই সঙ্গে টেকসই মসৃণ রাস্তা উপহার পেয়েছে শহরবাসী। ফলে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের মঞ্চে অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিদের সামনে রেড রোডকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি মজবুত রাস্তার নজির হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 


    রেড রোডের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্যের পূর্তদপ্তরের। কয়েকবছর আগে রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে হট মিক্স প্লান্ট ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তার পর জার্মান সংস্থার সাহায্যে মেকানাইজড ম্যাসটিক অ্যাসফাল্ট পদ্ধতিতে রেড রোড সহ তার আশপাশের কিছু রাস্তা মিলিয়ে প্রায় ৭.৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে রাজ্য সরকার। প্রায় ৬.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভিআইপি রোডও তৈরি হয় এই একই পদ্ধতিতে। পূর্তদপ্তরের এই পরিবেশবান্ধব রাস্তা তৈরির প্রযুক্তিকে সাধুবাদ জানিয়ে দু’কোটি টাকার পারফরম্যান্স ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি মুক্ত করে। এবার রাজ্যের তরফে পথের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসে। পূর্তদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ ও এক্স অফিসিও সেক্রেটারি দিলীপ বৈদ্য, সড়ক শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সদর) মুজতারাব হুসেন, জাতীয় সড়ক শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব চট্টরাজ সহ ১৫ জনের দলকে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পাঠিয়েছিল রাজ্য। 


    প্রসঙ্গত, কলকাতার আগে শুধু মাত্র মুম্বইতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছু রাস্তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের উপস্থাপনা দেখে রায়পুরের সম্মেলনে উপস্থিত মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রের পদস্থ কর্তারাও পশ্চিমবঙ্গের সুখ্যাতি করেছে। কারণ একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও, কলকাতার কাজের ধরন ছিল একেবারে অন্যরকম। যার জেরে রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে দূষণ সংক্রান্ত কোনওরকম সমস্যা হয়নি। বর্তমানে নয়া দিল্লিতে বায়ুদূষণ সূচক মাত্র ছাড়িয়েছে। সেই সময় কলকাতার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের জন্য জাতীয় স্তরে প্রশংসিত হওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
  • Link to this news (বর্তমান)