জেলা স্তরের বাজারগুলি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীতকালীন আনাজ বাজারে আসতে শুরু করলেও আনাজের দাম যতটা কমার কথা, ততটা কমেনি। কিছু জেলায় দাম কমার লক্ষণ থাকলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আনাজ এখনও অগ্নিমূল্য। ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের একাংশের দাবি, বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। তাই জোগানও তুলনায় কিছুটা কম।
কষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য বলেন, ‘‘পেঁয়াজ এবং আলু ছাড়া বাকি সব আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজারগুলিতে ঘুরে ঘুরে দৈনিক দামের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।’’
জেলাগুলি থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী, এখনও বেশির ভাগ জায়গায় বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি, যা আগের কয়েকটি সপ্তাহের থেকে কিছুটা কম। কোনও কোনও জেলায় তা ৫০-৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে। কেজি প্রতি টোম্যাটো ৬০-৮০, ক্যাপসিকাম ৮০-১০০, শিম ৬০, গাজর ৮০-১০০, শসা ৪০, বিন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পটল, ঝিঙে, চিচিঙ্গে, ঢ্যাঁড়সের দাম গত কয়েক দিনে বেড়েছে। তবে, কমেছে পেঁয়াজ, ওলকপি, বাঁধাকপি, বিন, লঙ্কার দাম। আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম কমেছে হুগলি জেলাতেও।
হাওড়া জেলায় বাঁধাকপি চড়া দামে (৫০-৫৫ টাকা) বিকোলেও ফুলকপির দাম ছিল কিছুটা কম (২৫-৩০ টাকা)। বীরভূমে আনাজের দাম কমার ইঙ্গিত রয়েছে। দুবরাজপুর বাজারের ব্যবসায়ী সেন্টু দে এবং সিউড়ি কোর্ট বাজারের আনাজ বিক্রেতা বীরু আলি বলছেন, ‘‘আনাজের দাম আগের তুলনায় কম। তবে বৃষ্টিতে যে ক্ষতি স্থানীয় আনাজ চাষিদের হয়েছিল, সেটা এখনও পূরণ হয়নি।’’ ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বিয়ের মরসুম চলছে বলে দাম একটু চড়া। দিনকয়েকের মধ্যেই দাম নাগালে চলে আসবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
রাজ্যের দু’-একটি জায়গায় জ্যোতি আলুর দাম ২৫-২৮ টাকা কেজিতে নামলেও কলকাতা থেকে কোচবিহার, জ্যোতি আলু ৩৫-৪০ টাকা কেজি এবং চন্দ্রমুখী আলু ৫০-৬০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে পেঁয়াজের দামও কমেনি। রসুন ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ জায়গায়। কাঁচালঙ্কা ৬০-৭০ টাকা, এমনকি ধনেপাতাও ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কিছু জায়গায়। অবশ্য সরকারি সূত্রের দাবি, সুফল বাংলার স্টলগুলির মাধ্যমে আলু (প্রধানত জ্যোতি) জেলাগুলিতে ২৫ এবং কলকাতায় ২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ নভেম্বর আলুর দরকে কেন্দ্র করে আধিকারিকদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের চাহিদা না মিটিয়ে কেন আলু হিমঘর থেকে বার করে বাইরে পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। তার পরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের নিয়মিত বৈঠকের উপরে জোর দিয়েছিলেন মমতা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও বৈঠক করেন টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, বাজারগুলির উপরে নজরদারিতে টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি স্থানীয় থানাগুলিকেও সক্রিয় করা হয়েছে। সরকারি সূত্র দাবি করছে, শীতের আনাজগুলি পুরোপুরি বাজারে চলে এলে দাম আরও নাগালের মধ্যে আসবে।