যেমন, কোনও একটি হেরিটেজ ভবনের নাম হয়তো গ্রেড ওয়ানের তালিকায় থাকা উচিত। কিন্তু সেটি আছে গ্রেড টুবি তালিকায়। অথবা একই ধরনের একাধিক বাড়ি আলাদা আলাদা গ্রেডভুক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের ভ্রান্তি এড়াতে এখন থেকে গ্রেডেশনের পিছনে যুক্তিসম্মত কারণও নথিভুক্ত করা থাকবে। যাতে আদালতে বা অন্য কোথাও প্রশ্ন উঠলে পরিষ্কার ভাবে বিষয়টি সামনে আনা যায়।
পুরসভার হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির সদস্য হিমাদ্রি গুহ ওই তালিকা যুক্তিসম্মত ও তথ্যভিত্তিক ভাবে তৈরি করার প্রস্তাব পেশ করেন। তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। খিদিরপুরের কার্ল মার্ক্স সরণিতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি নিয়ে আদালতে বিভিন্ন নথি পেশ করার ক্ষেত্রে বিতর্ক হয়েছিল। হিমাদ্রি বলেন, ‘‘ওই বাড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বসবাস সংক্রান্ত পুরনো প্রবন্ধ আদালতে দাখিল করেছিলাম। কিন্তু আদালতের মতে, পুরসভার পেশ করা সেই সমস্ত প্রবন্ধ প্রামাণ্য নথি বলে গণ্য করা যায় না। তাতে ভুলের অবকাশ থাকতে পারে। এর পরেই পুরসভা ওই মামলায় হেরে যায়।’’ মাইকেল যে খিদিরপুরের ওই বাড়িতে থাকতেন, তার কোনও প্রামাণ্য নথি পাওয়া যায়নি বলে জানান রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘মাইকেল খিদিরপুরের বাড়িতে ছিলেন কিনা, তা পুরসভার হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে বিশদে জানতে চেয়েছিল। আমরাও এ বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য নথি পাইনি।’’
পুরসভার প্রাক্তন ডিজি (নগর পরিকল্পনা) দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘হেরিটেজ সংক্রান্ত তালিকা এবং আইন তৈরির সঙ্গে আমি সরাসরি যুক্ত ছিলাম। নির্দিষ্ট নথি অনুযায়ীই ওই তালিকা তৈরি হয়েছিল। আজ কেন সেই নথি পাওয়া যাচ্ছে না, তা বোঝা মুশকিল।’’ এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে, হেরিটেজ তালিকা ঘোষণার ক্ষেত্রে পুরসভাকে আরও গ্রহণযোগ্য প্রামাণ্য নথি সংগ্রহ করতে হবে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক অনিল সরকার জানান, হেরিটেজ তালিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ দিকে, এ দিনের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মেয়র পারিষদ (হেরিটেজ) স্বপন সমাদ্দারকে। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বপন বলেন, ‘‘আমাকে আলোচনায় ডাকা হয়নি। কী আর বলব! হেরিটেজ সংক্রান্ত কাজ কিছু ফেলে রাখি না।’’