ই. গোপী: শহর দূষণে ভরা। আর তাতে অতিষ্ঠ হয়ে এবার নিজের জন্মভূমি, জন্মশহর, জন্মভিটে ছাড়তে চাইছেন শহরের আদি বাসিন্দারা। এ ছবি খড়্গপুরের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রেলশহর খড়্গপুর। সেই রেলশহরে দূষণ বহুদিনের সমস্যা।
তবে ইদানীং তা আরও বাড়ছে, এমনই অভিযোগ তুলছেন ওই অঞ্চলের বসবাসকারীরা। শহর খড়্গপুরের মূলত নিমপুরা, মালঞ্চ, ভগবানপুর, খরিদা, সুভাষপল্লী, শ্রীকৃষ্ণপুর, ভবানীপুর এবং গ্রামীণ খড়্গপুরের শ্যামরাইপুর, কাঁটাপাল, মহেশপুর, গোকুলপুর-সহ নানা অঞ্চল ও তার সন্নিহিত এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি। খড়্গপুর শহর ও দূষণের কবলে পড়া সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে এখানে গাছের পাতা সবুজ দেখতে পাওয়া যেত, কিন্তু গত ১০ বছর ধরে সে-দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে এখানকার সবুজ পাতা। বিভিন্ন কারখানার এতই দূষণ যে, এর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার মানুষজন।
এজন্য অনেকেরই ইতিমধ্যে ফুসফুসের অসুবিধা দেখা গিয়েছে! অনেকেই চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতেও শুরু করে দিয়েছেন এজন্য। অসুস্থ হয়ে পড়া অনেকেই জানাচ্ছেন, তাঁরা কোনও দিন ধূমপান বা ওই জাতীয় থেকে শুরু করে অন্য কোনও রকম নেশাই কখনও করেননি। তবুও, তাঁদের এই ধরনের অসুস্থতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শুধু মাত্র এলাকার দূষণের কারণে।
চিকিৎসকেরাও সেই তত্ত্বে সিলমোহর দিচ্ছেন। রোগী পরীক্ষা করে তাঁরা বলছেন, দূষণের ফলেই এঁদের এমন রোগ ধরা পড়েছে। এ থেকে বাঁচার উপায় কী? দেখতে গেলে প্রায় কোনও উপায়ই নেই, এলাকা পরিত্যাগ করা ছাড়া। আর তাই এবার নিজেদের বাঁচাতে অনেকেই আর এলাকা ছাড়তে দ্বিধা বোধ করছেন না!
তবে বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন ভুক্তভোগীরা। খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যানে কল্যাণী ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন! প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির সঙ্গে যে-যে পক্ষ জড়িত তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন।
কিন্তু আদতে কী হবে? রেলশহর খড়্গপুর কি তাহলে এভাবেই দূষণের আড়ালে ঢাকতে থাকবে? এর সুরাহ কী? এর দায় কার? দায়বদ্ধতটাই-বা কার? এসব প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।