• নবদ্বীপে ভাগীরথী নদী থেকে কাদামাটির নামে তোলা হচ্ছে বালি, চিঠি প্রশাসনকে
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কাদামাটির নামে অবৈধ উপায়ে নবদ্বীপে ভাগীরথী থেকে বেপরোয়াভাবে তোলা হচ্ছে বালি। নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে কয়েক গুণ বেশি বালি নদীর বুক থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সরাসরি চিঠি এসেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গোটা বিষয়টা তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। তবে এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ প্রশাসনের আধিকারিকরা। এই অভিযোগ ও চিঠি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নবদ্বীপের বালি মাফিয়াদের সিন্ডিকেটের মাথায় বসে রয়েছে শাসকদলের ক্ষমতাবান নেতারা। গোটা বিষয়ে প্রশাসনের লোকজনের যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নদী থেকে তোলা অতিরিক্ত বালি নাকি বাইরে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তাই ভাগীরথী নদীর অবৈধ বালি কারবারের প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা, জনপ্রতিনিধি নাকি প্রশাসনের আধিকারিক— তা নিয়ে জেলাজুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। 


    জানা গিয়েছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনেরাল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড নবদ্বীপ পুরসভাকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভাগীরথী নদীর তলার কাদা বা স্লাজ তোলার অনুমতি দেয়। সেইমতো নবদ্বীপ পুরসভা একটি সংস্থাকে দিয়ে ওই কাজ করায়। কিন্তু সেখানে স্লাজের পরিবর্তে ভাগীরথী নদী থেকে অবৈধভাবে বেপরোয়া বালি তোলা হচ্ছিল। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনের কাছে এই নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। যদিও নবদ্বীপ পুরসভার দাবি, রয়্যালটি দিয়েই নদী থেকে নিয়ম মেনে স্লাজ তোলা হয় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। পাশাপাশি এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 


    এব্যাপারে নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘নির্দিষ্ট আধিকারিক এখানে প্রতিদিন পরিদর্শনে আসেন। তাঁরা বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে স্লাজ তোলার কাজ বিগত পনেরো দিন ধরে বন্ধ আছে। আমার যতটা প্রয়োজন, ততটা স্লাজ তোলা যায় নির্দিষ্ট অনুমোদনের ভিত্তিতে। এই স্লাজ পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে স্লাজ তোলার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার জন্য উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’


    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্পোরেশনে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে দিন দশেক আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নদীয়া জেলা প্রশাসনের কাছে একটি ‘গোপন’ চিঠি আসে। সেখানে ভাগীরথী নদী থেকে কাদামাটি বা ‘স্লাজ’ তোলার আড়ালে নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেশি পরিমাণ বালি অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বলে জানানো হয়। রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহলের এই চিঠিতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। নবদ্বীপে ভাগীরথী নদীর বুক থেকে বালি তোলার বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার এই নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও অভিযোগ পাওয়ার দশদিন পরেও এখনও পর্যন্ত কোনও কড়া পদক্ষেপ প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নবদ্বীপে ভাগীরথী নদীর ধারে ইটভাটার জায়গা অবৈধভাবে বুজিয়ে ফেলেছে বালি মাফিয়ারা। সেই নিয়ে নবদ্বীপ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থানায় এফআইআর করেছে। সেখান থেকে অতীতেও বেশকিছু মেশিনপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)