জোগান প্রচুর, পূর্বস্থলীর পাইকারি বাজারে তিন টাকায় ফুলকপি, মাথায় হাত চাষিদের
বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: জোগান বেড়ে যাওয়ায় পূর্বস্থলীতে ফুলকপির দাম এক ধাক্কায় অনেকেটা কমে গেল। বাজারে ফুলকপির ছড়াছড়ি, অথচ কেনার লোক নেই! পাইকারি বাজারে মঙ্গলবার তিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ ন’টাকায় ফুলকপি বিক্রি হয়েছে। আচমকা বাজারে জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম নেমে গিয়েছে বলে জানান আড়তদাররা। ফুলকপির দাম না পাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। অথচ এদিন কাটোয়া, বর্ধমান শহর ও আশপাশের এলাকায় মাঝারি সাইজের ফুলকপি ২৫-৩০টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দু’দিন আগেও ১০-১২টাকা দাম পেয়েছেন চাষিরা। কিন্তু এদিন আচমকা আনাজের দাম কমে যায়। পূর্বস্থলীর পারুলিয়া, কালেখাঁতলা, ফলেয়া স্টেশন বাজারগুলিতে একই চিত্র দেখা গিয়েছে। বাজারে জোগান এতটাই বেড়েছে যে অনেক চাষির ফুলকপি বিক্রিই হয়নি। তাঁদের দাবি, গবাদি পশুকে খাইয়ে দিতে হবে। তা না হলে ফুলকপি পচে যাবে। পারুলিয়া বাজারের আড়তদার মদন সাহা বলেন, বাজারে জোগান বেড়ে যাওয়ার কারণেই আচমকা ফুলকপির দাম কমে গিয়েছে। সর্বনিম্ন দু’-তিন টাকায়, আর বড় সাইজের কপি ন’টাকা দামে বিক্রি করছি।
পূর্বস্থলী-২ ব্লককে পূর্ব বর্ধমান জেলার সব্জির ভাণ্ডার বলা হয়। বিঘার পর বিঘা জমিতে সারা বছর সব্জি চাষ করেন চাষিরা। এলাকায় পাঁচটি বড় পাইকারি সব্জির আড়ত রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারটি হল কাঁলেখাতলায়। এছাড়া পারুলিয়া, ফলেয়া, জামালপুর মোড়, বিশ্বরম্ভাতেও পাইকারি সব্জি বাজার রয়েছে। এখানকার বাজারগুলিতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার সব্জি বিক্রি হয়। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার সব্জি ব্যবসায়ীরা পূর্বস্থলীর আড়ত থেকে সব্জি সংগ্রহ করেন। সারা বছর নানা রকম শাক-সব্জির আমদানি হয়। ফলনও ভালো হয়। প্রতি বছর শীতের মরশুমে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুলকপির দাম কমে যায়। গত বছর পাইকারি বাজারে এক টাকাতেও ফুলকপি বিক্রি হয়েছে। এবার নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই ফুলকপির দাম কমে গেল।
প্রতিদিন ভোরে চাষিরা ভ্যান, সাইকেলে করে পূর্বস্থলীর বাজারগুলিতে আনাজ নিয়ে আসেন। চাষিদের কাছ থেকে তা কিনছেন আড়তদাররা। এখানকার সব্জি বাইরে গেলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। প্রসঙ্গত, এবার দফায় দফায় বৃষ্টিতে পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভা সহ বিভিন্ন এলাকার ফুলকপির জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দাম বাড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আচমকা দাম কমে যাওয়ায় চাষের খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তাঁদের একাংশ বলেন, এভাবে দাম নেমে যাওয়ায় চাষের খরচটুকু উঠবে না। লাভ তো দূরের কথা। ফলেয়া স্টেশনবাজার এলাকার আড়তদার নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, আমাদের বাজারে মেড়তলা, কালেখাঁতলা, মাজিদা অঞ্চল থেকে চাষিরা সব্জি নিয়ে আসেন। এবার সাড়ে তিন টাকা, চার টাকাতে ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সব্জি চাষি নুরুল ইসলাম শেখ বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। এসময় সব চাষিই একসঙ্গে ফসল তুলে বাজারে নিয়ে এসেছে। জোগান বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে এই ফুলকপিই আবার শহরে বেশি দামে বিক্রি হবে। অথচ আমরা দাম পাব না।