নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পাখির চোখ ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট। তার আগে ‘জলকষ্ট’ যাতে কোনও ভাবেই ভোটের ইস্যু না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যেই সমস্ত বাড়িতে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল যাতে পৌঁছে যায়, সে ব্যাপরে জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকেই ‘জাইকা’ জল প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজও শেষ করার জন্য সবরককম তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি সার্কিট হাউসে ‘জাইকা’ ও ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে ‘জাইকা’ প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরুর ব্যাপারে জেলাশাসককে আশ্বস্ত করেছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরী দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। পাশাপাশি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজও শেষ হবে বলে আশাবাদী প্রশাসন। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আদিত্যবিক্রম হিরানী বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরুলিয়ার সমস্ত বাড়িতে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাবে। জলের সমস্যা নিয়ে বাসিন্দাদের আর কোনও অভিযোগ থাকবে না।’
ফি বছর শীত ফুরোতেই পুরুলিয়া জেলায় জলের সমস্যা দেখা দেয়। গ্রীষ্ম যত এগিয়ে আসে ততই সঙ্কট বাড়তে থাকে। জলের দাবিতে আন্দোলন, পথ অবরোধ নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়। বাসিন্দাদের জলকষ্টের প্রভাব পড়ে ব্যালটেও। পুরুলিয়া জেলায় শাসকদল থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ এই জলের সমস্যা। তবে, সরকারে আসার পরেই ২০১৩-’১৪ সাল নাগাদ জাপানের আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। বরাদ্দ হয় ১২৯৬ কোটি টাকা। সিদ্ধান্ত হয়, মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত করে তা পানীয় জল হিসেবে জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশের পাঁচটি ব্লকে সরবরাহ কর হবে। জনস্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, মানবাজার ১, পুঞ্চা, বরাবাজার ও পুরুলিয়া-১ ব্লকের আংশিক এবং আড়শা ব্লকের সর্বত্র জল পৌঁছবে। ৪৫৮টি মৌজার মোট ৯২০২৭টি পরিবারে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নলবাহিত জল পৌঁছবে। এর পাশাপাশি, পুরুলিয়া পুরসভাতেও দৈনিক প্রায় ১২.৯২ মিলিয়ন লিটার জল যাবে। জাইকা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করছি আমরা আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই ট্রায়াল রান শুরু করতে পারব।’
জাইকা প্রকল্পের পাশাপাশি জেলার বাকি অংশে জল পৌঁছে দিতে জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজও চলছে জোরকদমে। এই প্রকল্পেও পাঞ্চেত ও মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জল উত্তোলন করে তা পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে। এই প্রকল্পে জেলার পাঁচ লক্ষের বেশি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে। তবে, ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তা যাতে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।