নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: কিছুদিন আগে রায়না ব্লক অফিসে জমা হওয়া রূপশ্রী প্রকল্পের একটি আবেদনপত্র দেখে আধিকারিকদের খটকা লাগে। আবেদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া বিয়ের কার্ড আধুনিক। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই এমন কার্ড করতে পারেন না। সাধারণত আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী পরিবারই এধরনের আমন্ত্রণপত্র ছাপায়। আধিকারিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর জানতে পারেন, পাত্রীর বাবা একজন শিক্ষক। তিনি মোটা অঙ্কের টাকা বেতন পান। তাঁর পরিবার রূপশ্রী প্রকল্পে টাকা পাওয়ার যোগ্য নয়। আধিকারিকরা আবেদনপত্র বাতিলের পাশাপাশি শিক্ষককে ডেকে সতর্ক করেন।
রায়না-১ ব্লকের বিডিও অজয় কুমার দণ্ডপাত বলেন, আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর তা খতিয়ে দেখা হয়। যাঁদের আয় বেশি তাঁরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ওই শিক্ষক নয়, তাঁর মতো আরও অনেকেই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করছেন। যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার নীচে তাঁরাই প্রকল্পের সুবিধা পান। বিয়ের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এক সময় এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে অনেকেই ভুয়ো আবেদন করতেন। রাজ্য সরকার কড়াকড়ি করার পরই ভুয়ো আবেদনের সংখ্যা কমতে থাকে।
মঙ্গলবার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতে মেয়ের বিয়ের কার্ডসহ আবেদনপত্র নিয়ে এক ব্যক্তি হাজির হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ১৫দিন পর মেয়ের বিয়ে। কার্ড সহ আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। এক আধিকারিক বলেন, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর সরকারি কর্মীরা পাত্রীর বাড়িতে যান। আদৌও বিয়ে হচ্ছে কি না তা খোঁজ নেন। সব কিছু যাচাই করার পর টাকা দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিগত ৭ মাসে শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৮ কোটি ৪৮লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এই প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে বিয়ের দিন বেশি থাকে। এই মাসে চলতি আর্থিকবর্ষে মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র জমা পড়বে বলে আধিকারিকরা মনে করছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিশু ও নারী উন্নয়ন দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ মাম্পি রুদ্র বলেন, যাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাঁদেরই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা উচিত। কোনও শিক্ষক বা চাকরিজীবীর মেয়ের বিয়ের জন্য আবেদন করা ঠিক নয়। মেয়ের বিয়ের খরচ জোগানের মতো আর্থিক সামর্থ তাঁদের থাকে। তারপরও কেন তাঁরা আবেদন করেন তা বোঝা যাচ্ছে না। আগেও অনেকে চাকরিজীবী পরিবার এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিল। এখন তা করেও লাভ হবে না। কারণ সরকারি কর্মীরা খোঁজ নেওয়ার জন্য গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছেন। এলাকার লোকজনদের কাছে থেকে তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করছেন।
অপর এক আধিকারিক বলেন, অনেকে ভুয়ো নথি দিয়ে প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য অতীতে আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ আসার পর বিভিন্ন জেলাতেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। মুর্শিদবাদে এই অনিয়ম সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য সরকার বেশ কিছু নতুন গাইডলাইন দেয়। তারপর থেকেই প্রতারণা অনেকটাই কমে গিয়েছে।