• গঙ্গার গ্রাসে ভিটে, কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ত্রিপলের নীচে বাস দুর্গতদের
    বর্তমান | ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: চাষের জমি, বাগান আগেই কেড়েছিল। মাস খানেক আগে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও গিলে খেয়েছে গঙ্গা। ভিটেমাটি সর্বস্ব হারিয়ে কার্যত পথে রাত কাটাতে হচ্ছে সামশেরগঞ্জের ভাঙন কবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবারকে। শীতের মরশুমে কনকনে ঠান্ডায় ত্রিপলের নীচেই তাদের কাটতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেকেই আত্মীয় বাড়ি এবং স্কুলের অস্থায়ী শিবিরে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার বিদ্যালয় চালু হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। না হলে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাতে চরম বিপাকে পড়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। এমন অবস্থায় এই প্রচণ্ড শীতে তাঁরা কী করবেন বা কোথায় যাবেন, ছোট ছোট বাচ্চা শিশুদের নিয়ে কীভাবেই বা রাত কাটাবেন, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।


    সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, যাঁরাই এসেছেন ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে ত্রিপল, কম্বল দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি বাদ পড়ে থাকেন তাহলে যোগাযোগ করলে তাঁদেরও দেওয়া হবে।


    জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগেই ভয়াবহ গঙ্গার ভাঙনে ঘটিবাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয় সামশেরগঞ্জের প্রায় শতাধিক পরিবার। শেষ সম্বল টুকু নিয়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয় পরিজনদের বাড়ি বা প্রতিবেশীর বারান্দায়। আবার কেউ কোনওরকমে আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী শিবিরে। সামশেরগঞ্জের ধানঘড়ায় নদীর ধারেই ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছেন পৌঢ় তফিজুল শেখ। মাস খানেক আগেই তাঁর বাড়ি গঙ্গা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় তিনি ত্রিপল টাঙিয়েই বাস করছেন। ছেলে, বউমা তাঁদের বাচ্চা নিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ জন। কোথাও গিয়ে থাকার মতো জায়গা না থাকায় কার্যত বাধ্য হয়েই সেখানেই কোনওরকমে দিনগুজরান করছেন। শিকদারপুরের ছ’টি পরিবার ৭৯ নম্বর শিকদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। পুজো অবকাশের পর স্কুল খুলে যাওয়ায় ছ’টি পরিবারকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে। আপাতত স্কুলের দোতলার দু’টি ঘরে তারা বাস করছে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে তাদের চলে যেতে বলা হয়েছে। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভুক্তভোগীদের। এছাড়াও শিবপুর, চাচন্ড ও প্রতাপগঞ্জের বেশ কয়েকটি পরিবার ত্রিপল ও চাটাইয়ের তৈরি কাঁচা ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।


    নদীর পাড়ে ত্রিপলের ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে তফিজুল শেখ বলেন, চোখের সামনেই সব তলিয়ে গিয়েছে। কিছুই বের করতে পারিনি। কোথায় আর যাব? যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। এখানেই ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছি, কী আর করব। শিকদারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ইকবাল শেখ বলেন, আমাদের সবকিছুই নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের স্কুল ছেড়ে চলে যেতে বললে মৃত্যু ছাড়া কোনও পথ নেই। গৃহবধূ পুষ্প সরকার বলেন, দু’টি ঘরে চার পাঁচটি পরিবার থাকছি। খুবই অসুবিধা করে রয়েছি। সরকারি কোনও সাহায্য নেই। আমাদের স্থায়ী ঘর না দিলে আমরা স্কুল ছেড়ে যাব না।
  • Link to this news (বর্তমান)